বিচার বিভাগ এভাবে চললে রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে যাবে -এ্যাটর্নি জেনারেল
নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা ১০ বছর অ্যাটর্নি জেনারেলের পদে আছেন মাহবুবে আলম। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০০৯ সালে এ পদে নিয়োগ পান তিনি। এক সাক্ষাতকারে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দীর্ঘ পথচলার অভিজ্ঞতা ও সফলতার আলোকে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি ও বিচার বিভাগের দুর্নীতি রোধে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন তিনি।
দীর্ঘ ১০ বছরে মামলায় সফলতায় বিষয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা ও জেলহত্যা মামলা পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিলাম। এছাড়া একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের মামলা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বাড়ি উদ্ধারের মামলা পরিচালনা করেছি। পাশাপাশি সরকারের বেহাত হওয়া বহু সম্পত্তি উদ্ধারের মামলা এবং মামলা করে চাকরি ফিরে পাওয়ার বিরুদ্ধেও প্রচুর মামলা পরিচালনা করেছি।
মামলায় হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে কখনও কোনও অনুভূতি আমার হয়নি। আমার মনে হয়, এ ধরনের জায়গায় থাকলে হুমকি আসবেই। তাছাড়া, মানুষের মৃত্যু তো হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনা, ভূমিকম্পে কিংবা লঞ্চ ডুবিতেও হতে পারে। তাই মৃত্যুর ভয়ে সবসময় আতঙ্কিত থাকলে কখনও তো কাজই করা যাবে না। তবে এসব হুমকির ফলে আমার নিজের স্বাধীনতা অনেকটা খর্ব হয়ে গেছে। রমনা পার্কের কাছেই থাকি। অথচ সন্ত্রাসীদের ভয়ে জীবনের নিরাপত্তার জন্য আমি একটি দিনও রমনা পার্কে হাঁটতে পারলাম না। এত বছর ধরে রমনা পার্কের পাশে থেকেও হাঁটতে পারলাম না। কোনও হোটেলে বা কোনও অনুষ্ঠানে যেতে পারি না। কেননা, সন্ত্রাসীরা কখন কোথায় ওঁত পেতে থাকে, তার কোনও ঠিক নেই।
ক্যারিয়ারে মামলার অপূর্ণতার বিষয়ে তিনি বলেন, দু’টি মামলায় এমনটি ঘটেছে। এর মধ্যে একটি ছিল জামাত নেতা সাঈদীর মামলা। তার ফাঁসি হওয়া উচিৎ ছিল, কিন্তু সেটা হয়নি। এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন থেকে কিছু কাগজ দাখিল করা উচিৎ ছিল, কিন্তু তা তারা দেয়নি। সেই কাগজগুলো জোগাড় করার জন্য আমি নিজেই বরিশাল ও পিরোজপুর গিয়েছিলাম। তবুও সেই কাগজগুলোর সন্ধান পাওয়া যায়নি। এছাড়া, নানারকম আইনি কারণ দেখিয়ে দু’টি মিল (মসলিন কটন মিল এবং আলিম জুট মিল) সরকারের হাত ছাড়া হয়ে যায়। এতে করে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি পানির দামে বিক্রি হয়ে গেছে।
১০ বছর অতিবাহিত হলেও নতুন সরকার তাকে বহাল রাখার বিষয়ে বলেন, আইনের অঙ্গনে আমার থেকে যারা জুনিয়র আছেন, তাদেরও তো আশা আকাঙ্খা রয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়ার। কেননা, আমি মনে করি, এ পদের জন্য এখনও অনেক যোগ্য ব্যক্তি আছেন। আগামী দিনের বিসয়ে তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো বিচার বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত করা। বিচার বিভাগ যেভাবে চলছে, এভাবে চলতে থাকলে রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে যাবে। বিচার বিভাগ হলো রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের একটি। তাই বিচার বিভাগ যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে যায়, তাহলে কোনও কিছুই আর টিকবে না।
বিচার বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে নিজের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বক্তব্যটা ছিল একটি মেসেজ। ওই বক্তব্যের জের ধরে দুর্নীতি রোধে কিছু পরিবর্তন এসেছে। প্রধান বিচারক বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে এসব পদক্ষেপে সবকিছু হবে না। এর থেকেও কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিচার বিভাগের দুর্নীতি রোধে তিনি বলেন, বিচার বিভাগে দুর্নীতির সঙ্গে যারা যুক্ত আছে, তাদেরকে অনতিবিলম্বে বের করে দিতে হবে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন