হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো মনোনয়ন বাতিল করা যাবে নাঃ কলকাতা হাইকোর্টে
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসরণে আলিপুরে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের দঙ্গলে চরম হেনস্তার শিকার, বাধাপ্রাপ্ত ভাঙড়ের পোলেরহাট ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১ জন প্রার্থী। এই ঘটনার উল্লেখ করে মঙ্গলবার সকালে কমিশনের বিরুদ্ধে সরাসরি আদালত অবমাননার অভিযোগ আনল সিপিএম। যদিও ওই ১১ জনের মধ্যে ন’জন যাতে ভোটে লড়তে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য বিচারপতি সুব্রত তালুকদার নির্দেশ দিয়েছেন।
সিপিএম এদিন অভিযোগ এনেছে, ২০ এপ্রিল দেওয়া নতুন করে ভোটপ্রক্রিয়া চালু করার জন্য আদালতের নির্দেশও রাজ্য নির্বাচন কমিশন আক্ষরিক অর্থে মানেনি। মনোনয়নপত্র দাখিল করতে যাওয়া প্রার্থীদের ন্যূনতম নিরাপত্তার ব্যবস্থা কমিশন রাজ্যের কোথাও করেনি। তবে বিচারপতি তালুকদার জানিয়েছেন, বুধবার অভিযোগ শোনা হবে।
কংগ্রেস ও বিজেপি’র তরফে এদিন আদালতে অভিযোগ করা হয়, হাইকোর্টের ২০ এপ্রিলের নির্দেশ অনুযায়ী, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে ভোটের দিনক্ষণ ঠিক করার কথা ছিল। অথচ, তা হয়নি। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী, একটি নির্দেশিকা মারফত ভোটের যাবতীয় দিন ঘোষণা করতে হয়। তা ভাগেভাগে করা যায় না। অথচ, কমিশন সেটাই করছে। এমনকী মনোনয়নপত্র দাখিল করার দিন কমিশনের আগে ঘোষণা করে দেন রাজ্য সরকারের এক আমলা। কীভাবে এটা হয়?
অন্যদিকে ভাঙড়ের জমি, জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির তরফে শর্মিষ্ঠা চৌধুরী আদালতকে অভিযোগ করেন, সোমবার দেওয়া হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসরণে তাঁরা আলিপুরে জেলাশাসকের অফিস চত্বরে গিয়েছিলেন। পুলিসি নিরাপত্তা চেয়েও পাওয়া যায়নি। আচমকাই সেখানে ১০০-১৫০ দুষ্কৃতী তাঁদের উপর হামলা চালায়। তাঁদের যাবতীয় নথিপত্র ছিঁড়ে দেয়। টেনে হিঁচড়ে তাঁদের পার্শ্ববর্তী একটি বস্তিতে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়। ঘন্টাখানেক পরে ছাড়া হয়।
এমন অভিযোগের জবাবে কমিশনের তরফে বলা হয়, ভাঙড়ের পোলেরহাট ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের ন’জনের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। বিস্ময় প্রকাশ করে চৌধুরী জানান, মনোনয়নপত্র দাখিল করতে না পেরে তাঁরা হোয়াটসঅ্যাপ মারফত প্রার্থীদের নামধাম কমিশনকে পাঠিয়েছিলেন। তারই ভিত্তিতে সম্ভবত কমিশন এমন দাবি করছে। কিন্তু, মনোনয়নপত্র যেখানে দাখিল হয়নি, তার সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা হয়নি, এমনকী প্রয়োজনীয় অর্থ জমা না হওয়া সত্ত্বেও তা কীভাবে গৃহীত হয়? আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, স্ক্রুটিনির সময় এইসব কারণে তাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল করার রাস্তা কি এভাবেই খোলা রাখা হচ্ছে? পোলেরহাট ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েত বিরোধী শূন্য রাখার জন্যই কি কমিশন এমন পদক্ষেপ করছে?
এই প্রেক্ষাপটে কমিশনকে উদ্দেশ্য করে আদালত তার রায়ে বলেছে, যে ন’জনের মনোনয়নপত্র গৃহীত হয়েছে বলে নথি পেশ করা হয়েছে, তাঁরা যাতে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন, তা কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে। কোনও টেকনিক্যাল কারণ দেখিয়ে মনোনয়নপত্রগুলি বাতিল করা যাবে না। এই মামলায় আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত যেসব প্রশ্ন উঠেছে, সেই প্রসঙ্গে ২৮ এপ্রিল প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর ৩০ এপ্রিল আদালত বিচার করবে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন