শিলাদিত্য দেবের বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্যের প্রতিবাদে ভারতীয় দূতাবাসে প্রতিবাদ লিপি
সাস নিউজ ডেক্স: বিজেপি থেকে নির্বাচিত আসামের বিধায়ক শিলাদিত্য দেবের সাম্প্রতিক বিতর্কিত মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিশিষ্টজনরা। ভারতীয় দূতাবাসে দেয়া এক স্মারকলিপিতে শিলাদিত্যের মন্তব্য প্রত্যাহার করে তাকে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানানো হয়। গত ১৯ মার্চ আসামের এমএলএ শিলাদিত্য আসামের একটি সংবাদ মাধ্যমে মন্তব্য করেছিলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন করাটা ছিল ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও তার সরকারের “বিরাট ভুল” এবং ভারতের উচিত ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরই বাংলাদেশকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া। শিলাদিত্যের মতে, “আসামের প্রতিটা ধর্ষণেই বাংলাদেশী মুসলমানরা জড়িত। সারা বিশ্বেই মুসলমানদের অপরাধের হার সবচেয়ে বেশি।”
বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে এই প্রতিবাদলিপিটি পাঠিয়েছেন বিশিষ্ট সম্পাদক আল্লামা মুহম্মদ মাহবুব আলম, সাংবাদিক সাইয়্যিদ মুক্তাদুল হুসাইন ও সাংবাদিক মুহম্মদ আরিফুর রহমান; বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট এস.এম.শফিকুল ইসলাম, ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মুহম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব কাজী মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, বিশিষ্ট ফার্মাসিস্ট এ.বি.এম.রুহুল হাসান, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ মুহম্মদ আব্দুল আলী, বিশিষ্ট প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ আমিনুল ইসলাম মিয়া।
আজ সকাল ১১:১০ ঘটিকায় স্মারকলিপিটি ভারতীয় দূতাবাসে প্রদান করা হয়েছে। ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন দূতাবাসের কর্মকর্তা সেলিনা ।
বিজেপি সংসদের মন্তব্য প্রসঙ্গে স্মারকলিপিতে বলা হয়, আসাম বা ভারতের অন্য কোনো অঞ্চলে সংঘটিত অপরাধসমূহের সাথে বাংলাদেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। এগুলো একান্তভাবেই ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, যেগুলোর উদ্ভব ও বিকাশ ভারতের ভেতরেই।
বাংলাদেশকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার চিন্তাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য, আপত্তিজনক ও অবমাননাকর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে স্মারকলিপিতে। বিশিষ্ট নাগরিকগণ বলেন, যদিও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণ ও সরকারের বিশাল সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের জনগণ ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ, তবু শিলাদিত্যের মতো রাজনীতিবিদদের এটা স্পষ্টভাবে জানা উচিত যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভারত বা ইন্দিরা গান্ধীর দয়ার দান নয়। বরং বাংলাদেশের জনগণই বিপুল সংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করে নিয়েছে।
“সারা বিশ্বেই মুসলমানদের অপরাধের হার সবচেয়ে বেশি” – শিলাদিত্যের এই মন্তব্যকে ভিত্তিহীন, অসত্য, অপমানজনক ও অশিষ্ট হিসেবে আখ্যায়িত করে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গবেষণামূলক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে অপরাধের হার তুলনামূলকভাবে কম। বরং ভেনেজুয়েলা, পাপুয়া নিউ গিনি, হন্ডুরাস, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ও ভারতের মতো অমুসলিম-প্রধান দেশগুলোতেই অপরাধের হার বিশ্বে সর্বোচ্চ।
ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে ভারতের কতিপয় রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তার বাংলাদেশকে দায়ী করে বক্তব্য দেয়ার প্রবণতাতেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট নাগরিকগণ।
বিশিষ্ট নাগরিকগণ বলেন, বাংলাদেশকে জড়িয়ে আসামের বিধায়কের এমন ভিত্তিহীন, নিম্নমানের ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যে বাংলাদেশের জনগণের সাথে ভারতীয় জনগণের দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বের কেবল ক্ষতিই হবে। এভাবে অন্য দেশের ঘাড়ে দোষ চাপানোটা সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের সহজ পথ বলে স্মারকলিপিতে বলা হয়।
আসামের বিধায়ক শিলাদিত্য দেবের উল্লেখিত মন্তব্যসমূহ প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে স্মারকলিপিতে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন