১০ মাসে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে ৮ খুন
চট্টগ্রাম সংবাদদাতা : কথিত বড় ভাইদের ছত্রচ্ছায়ায় চট্টগ্রাম দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ২০টি কিশোর গ্যাং। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই গ্রুপগুলো জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের বিরোধে। চলতি বছরের গত ১০ মাসে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হয়েছে ৮ জন। যার সর্বশেষ শিকার নাহিদ নামে এক তরুণ। এ ছাড়া কিশোর অপরাধের কারণে নগরের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে অন্তত ১০টি।
জানা গেছে, নিহত নাহিদসহ কয়েকজন তরুণ-যুবক আগে ঘটে যাওয়া কোনো একটি ঘটনার প্রতিশোধ নিতে তারই বন্ধু সোহেলকে মারতে গিয়েছিল। কিন্তু বন্ধু সোহেলের স্ক্রু ড্রাইভারের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে নাহিদ নিজেই।
দেখা গেছে, দুই গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে মারামারি চলছিল। কয়েকজন নারী তাদের ছাড়াতে চেষ্টা করছে। অন্যরা যখন সোহেলকে মারছিল, তখন নাহিদ কিছুটা পিছিয়ে মাটিতে বসে পড়ে। রাস্তায় পড়ে আবার টলতে টলতে উঠে কয়েক পা এগিয়ে গেট ধরে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করতে গিয়ে ঢলে পড়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নাহিদ রাস্তায় পড়ে গেলে স্থানীয়রা তাকে ধরাধরি করে মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সোহেলের কথায় তারা সংঘবদ্ধভাবে লাঠিসোঁটা হাতে আমবাগান এলাকায় গিয়ে নাহিদকে হুমকি দেয়। পরে এলাকার কিশোর-তরুণরা সংঘবদ্ধ হয়ে সোহেলদের ধাওয়া দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ দুই গ্রুপকে দুই দিকে সরিয়ে দেয়।
সোহেল আমবাগান এলাকায় থাকলেও তার সঙ্গে পিচ্চি হানিফ, পাপ্পু, রায়হানসহ লালখান বাজার এলাকার চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসীর সখ্যতা ছিল।
মূলত, নগরের লালখান বাজারের এক আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারী ও কাউন্সিলর হিরণের অনুসারীদের মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় ওই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও মারামারি হয়েছিল।
এরই জের ধরে রোববার (৩ নভেম্বর) সোহেলকে একা পেয়ে নাহিদসহ কয়েকজন তাকে মারধর করতে থাকে। স্থানীয় নারীরা তাদের ছাড়িয়ে নিতে গেলেও এরই ফাঁকে সোহেলের হাতে থাকা স্ত্রু ড্রাইভারে দিয়ে সে নাহিদের পেট ফুটো করে দেয়।
নগরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ফেসবুক-টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ খুলে নিজেদের সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়াচ্ছে গ্যাং কালচারের কিশোর সদস্যরা। অনেক সময় দেখা যায়, স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে ঝামেলা হলে এরা ওই গ্রুপের মাধ্যমে অন্য সদস্যদের সে ঘটনা জানিয়ে দেয়। এরপর স্কুল ছুটি হলে তারা একত্রিত হয়ে অথবা অন্য সময়ে একজন আরেকজনের ওপর হামলা চালায়। কথিত প্রেম থেকে শুরু করে তুচ্ছ যে কোনো ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী সংঘাতে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র বলছে, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের জামালখানে কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র আদনান ইসপারকে প্রকাশ্যে মাথায় গুলি করে হত্যার পরপরই নগর পুলিশ অপরাধচক্রে জড়িত কিশোর এবং অপরাধপ্রবণ এলাকার তালিকা করেছিল। তালিকায় প্রায় ৫৫০ জন কিশোরের নাম এসেছিল। অপরাধপ্রবণ স্পট, যেখানে নিয়মিত আড্ডা বসে, এ ধরনের স্পটের নাম এসেছিল প্রায় ৩০০টি।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন