মায়ের কর্মব্যস্ততায় সন্তানদের ভিডিও গেমে আসক্তি!
নিজস্ব প্রতিবেদক: ভিডিও গেম, প্লে-স্টেশন, স্মার্টফোন বা ট্যাবের স্ক্রিনে আধুনিক কালের শিশু-কিশোররা ডুবে থাকছে সারাদিন। গবেষণায় গবেষকরা একটি স্কুলের তৃতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পর্যালোচনা করে দেখতে চেয়েছেন- শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকে যারা প্রতিনিয়ত সহিংসতামূলক ভিডিও গেম খেলে, তারা শিক্ষাবর্ষের শেষে গিয়ে উগ্র হয়ে যাচ্ছে কিনা। গবেষকরা জানতে পারেন, গেম খেলার পরিমাণ এবং গেমের ধরনের ওপর বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভরশীল। স্কুলের পারফরমেন্স খারাপ হওয়ার পেছনে ভিডিও গেম খেলার পরিমাণ অনেকাংশে দায়ী। সহিংসতামূলক ভিডিও গেম খেলার মধ্য দিয়ে ‘পৃথিবীটা একটা নির্মম জায়গা’ এ রকম একটা ধারণার জন্ম নেয়। কথাবার্তা ও শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মধ্যে এক ধরনের উগ্রতা কাজ করে, সমাজগত আচরণ তাদের মধ্যে লোপ পায়। যদি অভিভাবকরা সন্তানদের ভিডিও গেম খেলার পরিমাণ এবং স্ক্রিনে কী দেখবে- তার ধরনের ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলে প্রভাবটি কমতে পারে।
শৈশব নামের উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা ফারহানা মান্নান মনে করেন, যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিভাবকরা গেমের ধরন ও সময় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছেন সেহেতু ভিডিও গেম যেন শিশুর হাতে না পড়ে সেটাই যথাযথ পদ্ধতি। তিনি বলেন, ভিডিও গেমের রঙ, শব্দ, স্ক্রিন দ্রুত বদলে যাচ্ছে যা শিশুদের ভেতর উত্তেজনা তৈরি করে এবং তারা এর প্রতি ভীষণ আগ্রহী হয়ে ওঠে। বেশি বেশি ব্যবহার করতে চায় এবং ধীরে ধীরে খেলার সময়টা বাড়তে থাকে। অনেক বাবা-মা সন্তানকে বড় করার প্রক্রিয়ায় ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে অজান্তেই এই আসক্তিতে সন্তানকে অভ্যস্ত করে ফেলে। অনেক গবেষণায় দেখানো হয়, এর মধ্য দিয়ে ইতিবাচক কিছু শিখে থাকে কিন্তু সেগুলো এতোই ন্যূনতম যে ক্ষতির পরিমাণটা বেশি নজরে আসে। শিশু গেমে কখন আসক্তি হয়েছে জানা যাবে প্রশ্নে এই গবেষক বলেন, শিশুর সামনে যখন প্রাকৃতিক সামাজিক অনেক অপশন থাকার পরেও সে কেবল খেলতে চায় তখন বুঝতে হবে সে আসক্ত। নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারলে সে যদি অস্থির হয়ে ওঠে এবং মন খারাপ করে তখন সে আসক্ত।’
শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করেন গওহার নঈম ওয়ারা। তিনি বলেন, সন্তানকে শান্ত রাখতে মুঠোফোনসহ নানা যন্ত্রপাতি তাদের হাতে তুলে দেন ব্যস্ত মা-বাবারা। তারা নিজেরাও মুঠোফোনে ব্যস্ত থাকেন। নানা অজুহাতে সন্তানকে চোখে চোখে রাখার আকাঙ্খা থেকেও তেমনটা করেন। অনেক সময় সন্তানকে টেলিভিশন ছেড়ে ভিডিও দেখিয়ে খাওয়ান অভিভাবকরা। সেটি না করে তাকে সময় দিতে হবে এবং সেই সময়টা যেন সে উপভোগ করে সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকতে হবে অভিভাবকদের।
সেভ দ্য চিলড্রেন চাইলড ওয়াচ গভর্নমেন্ট অ্যান্ড চাইল্ড প্রটেকশন সেক্টরের পরিচালক আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, গেমস শিশুর যথাযথ বিকাশ ব্যাহত হয়। শিশু মানুষের সঙ্গে মিশতে শেখে না, সামাজিক দক্ষতা গড়ে ওঠে না, ফলে বাইরের পৃথিবী থেকে এই শিশুরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। অন্য দিকে, কী ধরনের ভিডিও গেম খেলছে তার ওপর নির্ভর করে তার ভেতরে হিংস্রতা, অশ্লীলতা, অসামাজিকতা কিংবা স্বার্থপরতার বিকাশ ঘটতে পারে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন