‘মধ্যপ্রাচ্যে বসেই চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি’
চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: দুই বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমানো তিন ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার, ম্যাক্সন ও একরাম সেখানে বসেই চট্টগ্রামে চাঁদাবাজির চক্র চালাচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবির ঘটনায় বন্দরনগরীর বায়েজিদ বোস্তামির ওয়াজেদিয়া এলাকা থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য।
মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বায়েজিদ বোস্তামি জোন) পরিত্রাণ তালুকদার শুক্রবার বলেন, “এরা সন্ত্রাসী সরোয়ার, ম্যাক্সন ও একরামের হয়ে বায়েজিদ বোস্তামি, অক্সিজেন, মুরাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিল।”
পরিত্রাণ তালুকদার জানান, সম্প্রতি ফোন করে দুই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা দাবি করা হয়। তদন্ত করতে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সরোয়ার, ম্যাক্সন ও একরাম মধ্যপ্রাচ্যে থেকেই চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে।
এই তিনজনের মধ্যে সরোয়ার ও ম্যাক্সন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘ক্যাডার’ হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করে। পরে চট্টগ্রাম পুলিশের করা ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীর’ তালিকায় তাদের নাম আসে।
আর একরামের পুরো নাম ইমতিয়াজ সুলতান একরাম। তিনি চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রী তাসফিয়া হত্যা মামলার পলাতক আসামি।
২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নুরুন্নবী ওরফে ম্যাক্সন ও চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে সরোয়ার ও গিট্টু মানিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একে-৪৭ রাইফেল ও গুলি।
বর্তমানে ভারতের কারাগারে বন্দি মৃত্যুদ-প্রাপ্ত শিবির ‘ক্যাডার’ সাজ্জাদ হোসেন খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে একসময় পরিচিত ছিলো সরোয়ার ও ম্যাক্সন।
পরে তাদের সম্পর্কের অবনতি হলে কারাগারে থাকা শিবিরের আরেক সন্ত্রাসী নাছির উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হয়ে ওঠে তারা।
২০১৩ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় সজ্জাদের সঙ্গে সরোয়ার ও ম্যাক্সনের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠলে নাছিরকে চট্টগ্রাম থেকে কাশিমপুর কারাগারে এবং সরোয়ার, ম্যাক্সনকে চট্টগ্রাম কারাগারের আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হয় বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
প্রায় ছয় বছর কারাগারে থাকার সময়ও সরোয়ার ও ম্যাক্সন তাদের অনুসারীদের দিয়ে বায়েজিদ এলাকায় চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করতো এবং তাদের হয়ে ইমতিয়াজ সুলতান ওরফে একরাম ‘মাঠের তদারকি’ করতো বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।
বায়েজিদ বোস্তামি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রিটন সরকার বলেন, ২০১৭ সালে কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে কাতারে চলে যান সরোয়ার ও ম্যাক্সন। আর তাসফিয়া হত্যা মামলায় আসামি হওয়ার পর একরামও কাতারে পাড়ি জমায়।
“এক গাড়ির যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গত ৬ সেপ্টেম্বর চাঁদা দাবি করে সরোয়ার, ম্যাক্সন ও একরাম। তাদের হয়ে চাঁদাবাজির কাজটা করত গ্রেপ্তার ওই যুবকরা। তাদের কথামত চাঁদা না দেওয়ায় ২৩ সেপ্টেম্বর নয়া হাটে ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়।”
পরিদর্শক প্রিটন বলেন, ওই ব্যবসায়ী থানায় কোনো অভিযোগ না করলেও পুলিশ এর তদন্ত শুরু করে। সম্প্রতি উজ্জ্বল দেওয়ানজী নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের নামে চাঁদা দাবি করা হয়।
“তদন্তে দেখা যায়, কাতারে থাকা সরোয়ার, ম্যাক্সন ও একরামের নির্দেশে উজ্জ্বলের কাছে চাঁদা চেয়েছিল আসলে রুহুল আমিন। তার খোঁজ পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কাতারে থাকা একরাম বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীর নাম ও মোবাইল নম্বর দিতেন রুহুল, জাবেদ ও রনিকে। তাদের মধ্যে রুহুল আমিন টেলিফোনে গিট্টু মানিক, সাজ্জাদসহ বিভিন্ন জনের পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করে সরোয়ার, ম্যাক্সন ও একরামের সঙ্গে বিদেশে কথা বলতে বলতো।
“অনেক সময় কাতার থেকে তারাও সরসরি বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে ফোন করে চাঁদা চাইত বলে আমরা জানতে পেরেছি। আবার কোনো কোনো সময় রুহুল আমিন টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে কাতার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ করত।”
দাবি পূরণ করা না হলে হুমকি ও হামলার ঘটনাও বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে জানিয়ে পরিদর্শক প্রিটন সরকার বলেন, “এরপরও অনেকে বিষয়টি গোপন করে গেছেন ভয়ে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে না জানিয়ে তারা আপসে টাকা দিয়ে দিয়েছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার জাবেদ ও তুহিনের বিরুদ্ধে আগের বেশ কয়েকটি মামলা আছে। অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ও চাঁদাবাজির ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা হবে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন