১০ বছরে সর্বনিম্ন চালের দাম, শঙ্কায় কৃষক
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বাজারে চালের দাম গত এক সপ্তাহে ৫ শতাংশ কমেছে। এতে ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি থাকলেও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। চালের দাম তলানিতে ঠেকায় লোকসানে পড়েছেন কৃষক। এ পরিস্থিতিতেই ঘনিয়ে আসছে আমন মৌসুম। তাই এবার নতুন ধানের দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। সমকাল
এবার বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। তা ছাড়া আমন মৌসুম ঘনিয়ে আসায় কৃষক চাল বিক্রি বাড়িয়েছেন। এতে বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে উদ্বৃত্ত চাল রপ্তানির সুযোগ চান মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা। তবে বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারে চালের দাম কম থাকায় রপ্তানির সুযোগ কম। এ ক্ষেত্রে মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ বাড়াতে পারে সরকার। পাশাপাশি কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমাতে সহায়তা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তারা।
বর্তমানে দেশের বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল গুটি ও স্বর্ণা ২২ থেকে ২৭ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া বিআর-২৮ ও লতাসহ অন্যান্য মাঝারি মানের চাল ৩০ থেকে ৩৫ এবং মিনিকেটসহ অন্যান্য সরু চাল ৪১ থেকে ৪৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে রাজধানীর খুচরা বাজারে কেজিতে দু-এক টাকা ব্যবধান রয়েছে। এই বাজারে নাজিরশাইল চাল ৫২ থেকে ৬০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার বাইরে চালের দাম বেশ কমে গেছে। বাগেরহাট মোল্লাহাটের দারিয়ালা বাজারের সিকদার এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী আতাউর রহমান জানান, প্রতি কেজি মোটা চাল ২২ থেকে ২৪ টাকা, মাঝারি চাল ৩০ ও সরু চাল ৪১ থেকে ৪২ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে এত কম দামে চাল বিক্রি করেননি তিনি। তার দোকান থেকে কোনো ক্রেতাকে ফেরত দেন না। সীমিত লাভ হলেই চাল বিক্রি করে দিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারেও একই দরে চাল বিক্রি হচ্ছে। রংপুর বিভাগীয় বাজারদরের তথ্য অনুযায়ী প্রতি কেজি মোটা চাল ২৩ থেকে ২৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তথ্য অনুযায়ী, এখন চালের দাম বেশ কম। তবে গত বছর চালের গড় দর ছিলো গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। জানা গেছে, এবার বোরো মৌসুমে কৃষক ৪৭০ থেকে ৪৮০ টাকা দরে ধান বিক্রি করেছেন। ফলে লোকসান দিয়ে তাদের ধান বিক্রি করতে হয়েছে। এদিকে, বর্তমানে মিলগেটে প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২১ টাকা, মাঝারি চাল ২৭ থেকে ২৯ ও সরু চাল ৩৮ থেকে ৪০ টাকায়। পাইকারি বাজারেও কম দামে বিক্রি হচ্ছে চাল।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, বর্তমানে কৃষকের কাছে ও মিলে পর্যাপ্ত উদ্বৃত্ত চাল রয়েছে। এ কারণে দাম কমেছে। কৃষককে চালের ন্যায্যমূল্য দিতে চাইলে উদ্বৃত্ত চাল রপ্তানি করতে হবে। এখন এটাই সমাধানের মূল পথ। কৃষক ও চাল ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করছে সরকার। এতে চালের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। এখন উদ্বৃত্ত চালের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে রপ্তানি চালু হলে এ সমস্যা সমাধান হবে বলে মনে করেন তিনি। আমন মৌসুম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার আমনেও বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে রপ্তানির বাজার খুঁজতে হবে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন