পতাকা বৈঠক না করেই জোরাজুরি করছিলো বিএসএফ
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর চারঘাট এলাকার সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ’র সংঘর্ষের ঘটনাটি নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যম। ভারতীয় জেলেদের আটক করাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সীমানায় বিএসএফ গুলি চালানোর পরই আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালানো হয় বলে জানিয়েছে বিজিবি। কিন্তু বলা হচ্ছে, পতাকা বৈঠকে গুলি চালিয়েছে বিজিবি।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিজিবির তথ্যমতে পতাকা বৈঠকের অপেক্ষা না করে তারা (বিএসএফ) আটক জেলেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করছিল। আর তখনই এই গোলাগুলির ঘটনা। এতে একজন বিএসএফ সদস্য মারা যায়। বিজিবি মহাপরিচালক ও বিএসএফের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। আমরা মনে করি, এটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আলাপের মাধ্যমে এর একটা সুরাহা হবে। রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বলেন। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে তিনি এসব কথা বলেন।
জানা গেছে, প্রায় সব ভারতীয় গণমাধ্যমেই শিরোনাম বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গুলি চালিয়েছে বিএসএফ জওয়ানের ওপর। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির সব ভাষার সংস্করণেই বলা হচ্ছে, পদ্মায় মাছ ধরতে এসে আটক ভারতীয় জেলের বিষয়ে আলোচনার জন্য পতাকা বৈঠক করতে গেলে তাকে ছেড়ে দিতেই অস্বীকৃতি জানায় বিজিবি। বিএসএফ সেনাদের ঘিরে ধরা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত সরে যেতে গেলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা।
দি ইকোনমিকস টাইম বলছে, পতাকা বৈঠক চলার সময়ই বিএসএফ সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় বিজিবি সদস্যরা। একই দাবি দৈনিক দ্য হিন্দু এবং নিউজ এইটিনের। টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং পশ্চিমবঙ্গের আনন্দ বাজার পত্রিকার দাবি, বিএসএফকে লক্ষ্য করে বিজিবিই গুলি চালিয়েছে। ২৪ ঘণ্টা জানায়, পতাকা বৈঠকের আগেই গুলি চালালে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এদিকে বাংলাদেশের ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ আগে গুলি ছুড়েছিল বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বিজিবি। সংস্থাটি জানিয়েছে, বিএসএফের গুলির পরিপ্রেক্ষিতে আত্মরক্ষার্থে গুলি করে বিজিবি। পরে এ ঘটনায় দুই বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠকে জানা গেছে, গোলাগুলিতে বিএসএফের এক সদস্য নিহত ও এক সদস্য আহত হয়েছে।
বিজিবি জানায়, রাজশাহী ব্যাটালিয়নের অন্তর্গত চারঘাট বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শূন্য লাইন থেকে পদ্মা নদীর পাড়ে আনুমানিক ৩৫০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারত থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী তিনজন জেলেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায়। বিজিবির চারঘাট বিওপির টহল দল মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান তদারকির জন্য উপজেলা মৎস্য অধিদফতরের ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট আবু রায়হান এবং আরও দুইজন সহকারী ঘটনাস্থল থেকে একজন জেলেকে অবৈধ কারেন্ট জালসহ আটক করতে সক্ষম হন এবং বাকি দুইজন জেলে ভারতের দিকে নৌকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে বিএসএফের ১৭১ ব্যাটালিয়নের কাগমারী বিওপি থেকে স্পিডবোটে করে চারজন বিএসএফ সদস্য চারঘাট উপজেলার বালুঘাট এলাকার শাহারিয়া ঘাটের বড়াল নদীর মুখে আনুমানিক ৬৫০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করলে চারঘাট বিওপির টহল দল তাদের বাধা দেয়। ওই চারজনের মধ্যে একজন বিএসএফ সদস্য ইউনিফর্ম পরা থাকলেও বাকিরা হাফপ্যান্ট ও গেঞ্জি পরা ছিল। বিএসএফ টহল দলের কাছে অস্ত্রও ছিল।
পরবর্তীতে বিএসএফ ওই জেলেকে জোর করে ফিরিয়ে নিতে চাইলে তাদের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে নিয়ম মাফিকভাবে ফেরত প্রদান করা হবে বলে বিজিবি টহল দল কর্তৃক জানানো হয়। এছাড়াও বিজিবি টহল দল বিএসএফ সদস্যদের আরও জানায়, আপনারাও অবৈধভাবে বাংলাদেশে এসেছেন, তাই আপনাদেরও নিয়ম অনুযায়ী পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তখন বিএসএফ সদস্যরা জোরপূর্বক আটক জেলেকে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে চাইলে বিজিবি সদস্যরা তাদের বাধা প্রদান করেন। বিএসএফ সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে ফায়ার করে এবং ফায়ার করতে করতে স্পিডবোট চালিয়ে ভারতের দিকে চলে যেতে থাকে। তখন বিজিবি টহল দল আত্মরক্ষার্থে ফায়ার করে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন