ক্ষমতার মোহে বেপরোয়া তুফান
সাস নিউজ ২৪ ডট কম : তুফান সরকার এখন সারা দেশে এক আলোচিত নাম। ক্ষমতার মোহে তিনি এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন যে, সম্ভ্রমহরণের পরও তিনি ক্ষান্ত হননি। নিজের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে নির্যাতিতা কিশোরী ও তার মা’কে তুলে মারপিট এবং নির্যাতনের পর দুজনের মাথা ন্যাড়া করার মতো রুমীয় বর্বরতাকে সামনে নিয়ে এসেছেন তিনি। এ ঘটনা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রশ্ন উঠেছে কে এই তুফান সরকার?
বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর কসাইপাড়া এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে তুফান সরকার। বড় ভাই বগুড়া শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার। স্ত্রীর বড় বোন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর। আর নিজে জাতীয় শ্রমিক লীগ বগুড়া শহর শাখার আহ্বায়ক। মোট কথা ক্ষমতার দাপটে বগুড়ায় এক ভয়ংকর নাম এই তুফান সরকার। ক্ষমতার বলয়ে তাদের পরিবার বলে টুঁ-শব্দটি করার জো নেই তাদের বিরুদ্ধে।
যদিও তুফানের উত্থান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর। বগুড়ায় জুয়ার আসর দিয়ে তার অবৈধ আয়ের যাত্রা শুরু। এরপর মাদক ব্যবসা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বগুড়ার মাদক রাজ্যের নিয়ন্ত্রক।
বড় ভাইয়ের সুবাদে রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন শহর শ্রমিক লীগের শীর্ষ পদ বাগিয়ে নেন। এরপর শুরু হয় ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স ব্যবসা। ব্যাটারিচালিত এসব রিকশা রাস্তায় নামানোর আগে প্রতিটির জন্য ২৫০০ টাকা দিতে হয় তুফানকে। হিসাব করলে দেখা যায় বগুড়া শহরে বর্তমানে ২০ হাজার ব্যাটরিচালিত রিকশা চলছে। সেই হিসাবে কি পরিমাণ চাঁদা তিনি আদায় করেছেন তার ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। আর প্রতিদিন এসব রিকশা থেকে ৩০ টাকা করে চাঁদা তোলা আছেই। এতে গড়ে প্রতিদিন ১০ হাজার রিকশা থেকে তিন লাখ টাকা চাঁদা তুফানের কাছে চলে যায়। গরিব এসব রিকশাচালকের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে কোটিপতি এখন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ ছাত্রী ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে করা দুটি মামলাসহ তুফান সরকারের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, মাদক ব্যবসাসংক্রান্ত ছয়টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ফেনসিডিলসহ একবার গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। এ ছাড়া ২০১৩ সালে যুবদল নেতা ইমরান হত্যা মামলারও আসামি তিনি।
রিমান্ডে তুফান
বগুড়ায় ছাত্রীকে সম্ভ্রমহরণের পর মারপিট এবং নির্যাতনের পর ধর্ষিতা ও তার মা’র মাথা ন্যাড়ার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তুফান সরকারসহ তিনজনকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রবিবার দুপুরে বগুড়ার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম শ্যামসুন্দর রায় এ আদেশ দেন।
রিমান্ডে নেওয়া আসামিরা হলেন বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ও তুফান বাহিনীর প্রধান তুফান সরকার (২৮), তার বাহিনীর সদস্য কসাইপাড়ার দুলু আকন্দের ছেলে আলী আজম দিপু (২৫) ও কালিতলার জহুরুল হকের ছেলে রূপম (২৪)।
এ ছাড়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি দেওয়ায় আতিকুর রহমানকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়নি। এ ছাড়া মামলার অন্যতম আসামি তুফান সরকারের স্ত্রীর বোন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি ও তার মা রুমি খাতুনকে রবিবার রাত ৮টার দিকে পাবনা থেকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আর গভীর রাতে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে তুফানের স্ত্রী আশাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন