রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহালে আপিল শুনানিতে পক্ষভুক্ত হতে ৫ বিশিষ্ট ব্যক্তির আবেদন
সাস নিউজ ২৪ ডট কম : বিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার বৈধতা নিয়ে করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানিতে পক্ষভুক্ত হতে বিভিন্ন পেশার পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি আবেদন করেছেন।
এই পাঁচজন হলেন- সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার, অনলাইন বিশ্ববার্তার সম্পাদক আরিফুর রহমান, প্রজেক্ট বিল্ডিং লিমিটেডের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. শওকত হোসেন খান, দেশ ইউনিভার্সাল লিমিটেডের উপদেষ্টা লে. কর্নেল (অব.)আবু ইউসুফ জোবায়ের উল্লাহ ও আল-মুতমাইন্নাহ মা ও শিশু হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক ডা. মোহাম্মদ আব্দুল আলী।
গত বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় তারা এ আবেদন করেন। আবেদনে এই পাঁচ ব্যক্তি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কখনো কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী আইন করেননি। উপরুন্ত এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ইসলাম। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে রিটকারী দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চান।
পরে একই দিন এই আবেদনটির ওপর চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদালতে শুনানি হয়। আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী।
শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে করা মুল আপিলের সঙ্গে শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। গতকাল ১৯ মার্চ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার বৈধতা নিয়ে করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য নির্ধারিত থাকলেও কার্যতালিকায় না আসায় শুনানি হয়নি।
তবে রিটকারী আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী জানিয়েছেন, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার বৈধতা নিয়ে করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য যেকোনো দিন আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসতে পারে।
এর আগে গত বছরের ১৬ নভেম্বর চেম্বার বিচারপতি এ বিষয়ে আপিল শুনানির জন্য ১৯ মার্চ নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।
১৯৮৮ সালে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা এবং ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি ফিরিয়ে আনা হলেও রাষ্ট্রধর্ম বহাল থাকে। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৫ সালের ১ আগস্ট রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন আইনজীবী সমেন্দ্র নাথ গোস্বামী।
তার দায়ের করা রিটের শুনানী শেষে ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ রাষ্ট্রধর্মের বৈধতা নিয়ে রিট সরাসরি খারিজ করে দেন।
গত ৬ নভেম্বর রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বৈধতা চ্যলেঞ্জ করে দায়ের করা রিট খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। এরপর ১২ নভেম্বর হাইকোর্টের এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী। পুর্নাঙ্গ রায়ের স্বাক্ষর করেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, সংসদ দেশের বাস্তবতার নিরিখে সংবিধান সংশোধন করতে পারে। বাংলাদেশের বাস্তবতার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বৈধ বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, দেশের বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে ‘ধর্ম নিরপেক্ষতার পরিধি বাড়ানোর আইনত ও সাংবিধানিক এখতিয়ার সংসদের। সংসদ সেটাই করেছে।’
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রধর্মের ধারণা আমাদের আদি সংবিধানে ছিল না। ১৯৮৮ সালে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ২ক অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়। যেখানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম ঘোষণা করা হয়।’
এই সংশোধনীতে বলা হয়, ‘২(ক)। প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যন্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।’
২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটাকে (২(ক)অনুচ্ছেদ) আরো কিছু পরিমার্জন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘২(ক)। প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম; তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সম-অধিকার নিশ্চিত করিবেন।’
এ দ্বারা স্বীকৃত যে, ২(ক)অনুচ্ছেদে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হলেও অন্যান্য ধর্মকেও সমমর্যাদা ও সম-অধিকার দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা ২(ক) অনুচ্ছেদ বাতিলের আবেদন গ্রহণ করতে পারছি না।
বর্তমান বাস্তবতার বিবেচনায় ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শ দেখার অধিকার জাতীয় সংসদের। জাতীয় সংসদ সেটাই করেছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন