৯০৯ কোটি টাকার ৯ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
নিজস্ব প্রতিবেদক: মোট ৯টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৯০৮ কোটি ৯৫ লাখ ৭৮ হাজার ৪৪৩ টাকা। বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে ই-জিপি সিস্টেম প্রচলন হওয়ার পর থেকে আমরা ভালো ফল পাচ্ছি। বিশেষ করে আগে বিভিন্ন প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ে নানা অরাজকতা হতো। এ ব্যবস্থা প্রচলনের পর থেকে সেসব আর হয় না। এছাড়াও সরকারের রাজস্ব বেড়েছে।
তিনি বলেন, ই-জিপি সিস্টেম অধিকতর উপযোগীকরণ, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য ডিআইএমএপিপি প্রকল্পের আওতায় ‘বাংলাদেশ ই-জিপি সিস্টেম এনহ্যান্সমেন্ট, অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স (ইওএম)’ শীর্ষক পরামর্শক সেবা ক্রয়ের প্রস্তাব আসে আইএমইডি থেকে। কমিটি প্রস্তাবটিতে অনুমোদন দিয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৮৫ কোটি ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ৩৫১ টাকা। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে জিএসএস ইনফো টেক লিমিটেড ও নমিনেটেড সাব-কন্সালট্যান্ট দোহাটেক নিউ মিডিয়া, বাংলাদেশ।
মুস্তফা কামাল বলেন, উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠানকরণ (আইডিইএ) প্রকল্পের আওতায় ‘ইন্টারওপারেবল ডিজিটাল ট্রানজাকশন প্ল্যাটফরম (আইডিটিপি) সার্ভিস, প্যাকেজ নং এসডি-১১’ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ব্যয় হবে ৫৪ কোটি ৯৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৯ টাকা। প্রকল্পটির কাজ পেয়েছে ওরিয়ন ইনফরমেটিক লিমিটেড, মাইক্রোসফট বাংলাদেশ লিমিটেড, ফিনটেক সলিউশনস লিমিটেড এবং সাইন ভেঞ্চারস লিমিটেড (জেভি)।
তিনি বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘মোংলা বন্দরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি/সরঞ্জাম সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর-১ এর আওতাধীন লট নম্বর-১ এর মাধ্যমে ১৪ সারির কন্টেইনারবাহী গিয়ারলেস জাহাজ হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য ৩টি মোবাইল হারবার ক্রেন ও এর আনুষঙ্গিক মালামাল ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এজন্য ব্যয় হবে ১২৫ কোটি ৪৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩১৫ টাকা। ক্রেনগুলো সরবরাহ করবে ম্যাক্সন পাওয়ার লিমিটেড, ঢাকা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘মোংলা বন্দরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি/সরঞ্জাম সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর-১ এর আওতাধীন লট নম্বর-২ এর মাধ্যমে ১০ মিটার ওয়ার্কিং রেডিয়াসে ৩০ মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি টায়ার মাউন্টেড মাল্টি পারপাস ক্রেন ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫৭ কোটি ১৯ লাখ ৭৪ হাজার ২০১ টাকা। ক্রেনগুলো সরবরাহ করবে ম্যাক্সন পাওয়ার লিমিটেড, ঢাকা।
তিনি বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘মোংলা বন্দরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি/সরঞ্জাম সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর-১ এর আওতাধীন লট নম্বর-৩ এর মাধ্যমে ৫ মিটার ওয়াকিং রেডিয়াসে ৩০ মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি মোবাইল হারবার ক্রেন ও আনুষঙ্গিক মালামাল ক্রযের প্রস্তাবটি অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ব্যয় হবে ১১ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার ৭১০ টাকা। ক্রেনগুলো সরবরাহ করবে ম্যাক্সন পাওয়ার লিমিটেড, ঢাকা।
এছাড়াও বৈঠকে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১: ডেভেলপমেন্ট অব শেওলা, ভোমরা রামগতি ল্যান্ড ল্যান্ড পোর্ট অ্যান্ড আপ-গ্রেডেশন অব সিকিউরিটি সিস্টেম অব বেনাপোল ল্যান্ড পোর্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের ডেভেলপমেন্ট অব শেওলা ল্যান্ড পোর্ট (প্যাকেজ নং বিএলপিএ /ডব্লিউ-২)’ প্যাকেজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এজন্য ব্যয় হবে ১২৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫২৭ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে এমএ বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স এবং মেসার্স অনিক ট্রেডিং করপোরেশন জেভি)।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আসন্ন রমজানে চিনি ও সয়াবিন তেলের মজুত বাড়াতে জরুরি ভিত্তিতে পণ্য দুটি ক্রয়ের আলাদা দুটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয়ের মাধ্যমে ২৫ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত চিনি ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আয়কর ও টিসিবির গুদামে পৌঁছানোর খরচসহ ব্যয় হবে ১৫৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। প্রতি কেজির দাম পড়বে ৬১ টাকা ২৫ পয়সা। সিটি গ্রুপের কাছ থেকে এসব চিনি সংগ্রহ করা হবে।
এছাড়াও স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয়ের মাধ্যমে ৩০ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত সয়াবিন তেল ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৯৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সুপার ওয়েল রিফাইনারি লিমিটেড ও বসুন্ধরা গ্রুপের কাছ থেকে এসব তেল সংগ্রহ করা হবে।
এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে দুটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে পিপিপি পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় শোধনাগার স্থাপন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণের নীতিগত অনুমোদন সংক্রান্ত প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয় বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তবে পিপিপির আওতায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত এস্টাব্লিশমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ট্যুরিজম কমপ্লেক্স অ্যাট একজিস্টিং মোটেল উপল কম্পাউন্ড অব বিপিসি অ্যাট কক্সেস বাজার’ শীর্ষক প্রকল্পটি পিপিপির পরিবর্তে জিওবি/সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী জানান।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন