৩ মাস বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, সেচের অভাবে ধানক্ষেত ফেটে চৌচির
লক্ষীপুর সংবাদদাতা: লক্ষ্মীপুরে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় গত তিন মাস ধরে ফসলি ক্ষেতের একটি সেচ প্রকল্পে সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে সেচ বন্ধ হয়ে পানির অভাবে জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। আবাদ করা ৩০ একর জমির বোরো ধানের চারা হলদে রঙ ধারণ করেছে। এসব জমিতে শিগগিরই পানি সরবরাহ না করলে ৩০৭ জন কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
পানির অভাবে হাল চাষ বন্ধ রয়েছে আরও ৪০ একর জমির। এতে বোরো আবাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থাপন করা নতুন খুঁটিতে শিগগিরই বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে সংকট নিরসনের দাবি কৃষকদের।
জানা গেছে, প্রায় ৩ মাস আগে সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন পল্লী বিদ্যুতের ঝুঁকিপূর্ণ একটি খুঁটি স্থানীয় শফিক উল্যার নারিকেল গাছের উপর ঝুঁকে পড়ে। এতে পাটওয়ারী ২ কিউসেক এলএলপি স্কিম-২ এর বিদুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর থেকে রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত সেখানে আর বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, ইটভাটায় মাটি বিক্রির একটি সিন্ডিকেট, পল্লী বিদ্যুতের কর্মী ও শফিক উল্যার খামখেয়ালিপনায় প্রকল্পটির বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ আছে।
রোববার দুপুরে কৃষক মনছুরকে জামিরতলি গ্রামের একটি ক্ষেতে বসে থাকতে দেখা যায়। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরাতন পানি থাকায় আমি মৌসুমের শুরুতেই প্রায় ২ একর জমিতে বোরো আবাদ করি। কিন্তু বর্তমানে পানির অভাবে আমার ক্ষেতের জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। শিগগিরই জমিতে পানি দিতে না পারলে ধানের চারাগুলো সব মরে যাবে।
জানা গেছে, পাটওয়ারী সেচ প্রকল্পের অধীনে সদর উপজেলার দক্ষিণ মান্দারী, পূর্ব মান্দারী, জামিরতলি ও পশ্চিম দিঘলী গ্রামের প্রায় ৭০ একর জমিতে পানি সেচ দেয়া হয়। এসব জমিতে ৩০৭ জন কৃষক ফসল আবাদ করেন। মৌসুমের শুরুতেই অর্ধশতাধিক কৃষক প্রায় ৩০ একর জমিতে বোরো চারা রোপণ করেছেন। পানির অভাবে এখনও ৪০ একর জমিতে হালচাষ করা সম্ভব হয়নি। দ্রুত পানি সেচ চালু না হলে এসব জমিতে ধান আবাদ সম্ভব হবে না। ওই ৩০ একর জমির ধানের চারাও নষ্ট হয়ে যাবে।
জামিরতলি গ্রামের কৃষক শামছুদ্দিন জানান, খালে পানি থাকা সত্ত্বেও সেচের বন্ধ থাকায় জমিতে ফাটল ধরেছে। বোরো ধান চাষাবাদের এখন শেষ সময়। কয়েকদিন পরই শুরু হবে কালবৈশাখী ঝড়। অথচ এখন পর্যন্ত জমিতে হালচাষ করতে পারেনি।
পাটওয়ারী সেচ প্রকল্পের পরিচালক নুরুল হুদা বাহার পাটওয়ারী বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে স্থানীয় একটি চক্র জটিলতা গৃষ্টি করেছে। তারা চায়, সেচ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাক। এতে ইটভাটায় মাটি বিক্রি করতে সহজ হবে। এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। এখন নতুন খুঁটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ করে পানি সেচের ব্যবস্থা না করলে চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) এমায়েত হোসেন বলেন, সংকট নিরসনে ঘটনাস্থলে প্রকৌশলী পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় সমস্যার কারণে সংযোগটি দেয়া যাচ্ছে না। শিগগিরই সংকট নিরসন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হবে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন