১৭ ফেব্রুয়ারি নৌবাহিনীর সমুদ্র মহড়া শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক:যুদ্ধকালীন, যুদ্ধপূর্ববর্তী ও শান্তিকালীন যে কোনো হুমকি মোকাবেলাসহ দেশের সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে বাৎসরিক সমুদ্র মহড়ার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। ‘এক্সারসাইজ সেফ গার্ড- ২০১৮’নামের এ মহড়া তিনটি পর্বে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
নৌবাহিনীর সদর দফতরের অপারেশন্স শাখা থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছ।
চিঠিতে বলা হয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধিতে সমুদ্র এলাকার গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের আমদানি-রফতানি পণ্যের ৯৫ ভাগই সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক জাহাজের মাধ্যমে বহন করা হয়। এছাড়া সমুদ্র এলাকায় তেল-গ্যাস উত্তোলন ও মৎস্য সম্পদ আহরণসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের সমুদ্র এলাকার গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার নৌবাহিনীকে বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী দেশের সমুদ্র এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছে।
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের পর বাংলাদেশ মূল ভূখণ্ডের ন্যায় ৮৮ ভাগ আয়তনের বিশাল সমুদ্র এলাকা হতে মৎস্য ও খনিজ সম্পদ আহরণের অধিকার অর্জন করেছে। এ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে ‘ব্লু ইকোনমি সেল’ কর্তৃক প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দেশের সমুদ্র এলাকায় যে কোনো সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতি ও শান্তিকালীন সময়ে যথাযথ নিরাপত্তা বিধানের জন্য নৌবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব সমুদ্র ব্যবহারকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় ও সহযোগিতা নিশ্চিত করা বিশেষ প্রয়োজন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্য যুদ্ধকালীন, যুদ্ধপূর্ববর্তী ও শান্তিকালীন যে কোনো হুমকি মোকাবেলাসহ দেশের সমুদ্র এলাকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ব্যবহার বা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের জন্য এবং সমুদ্র ব্যবহারকারী সংস্থার মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় ও যোগসূত্র অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশে নৌবাহিনী প্রতি বছরের মতো এবারও বাৎসরিক সমুদ্র মহড়া আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে।
এ বছরের সমুদ্র মহড়া তিনটি পর্বে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্বে (১৭-২০ ফেব্রুয়ারি) চারদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হরবোর ওয়ার্কআপ (আশ্রয় কর্মশাল) এবং ২১-২৩ ফেব্রুয়ারি তিনদিনব্যাপী হবে কনসোলিডেশন (একীকরণ)। দ্বিতীয় পর্ব অর্থাৎ ২৪-২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ‘সি কন্ট্রোল অ্যান্ড অপারেশন’ এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে ‘আর অ্যান্ড আর’ প্রোগ্রাম। সর্বশেষ তৃতীয় পর্বে (২-৫মার্চ) থাকছে ‘প্রোজেকশান অব পাওয়ার অ্যাট সি’ নামক কর্মসূচি।
‘এক্সারসাইজ সেফ গার্ড- ২০১৮’ এর সমাপনী দিবসের মহড়া পর্যবেক্ষণের জন্য রাষ্ট্রপতিকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।মহড়ার লক্ষ্য হিসেবে চিঠিতে উল্লেখ করা হয় যে, ‘সামুদ্রিক এলাকায় সংঘটিত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ এবং কর্ম সক্ষমতা অর্জন বিষয়ক জ্ঞান, ব্যক্তি এবং দলগত সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, সমুদ্রে অভিযান স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন যাচাই, জাহাজের অপারেশনাল প্রস্তুতি পর্যালোচনা, সমুদ্রে যে কোনো ধরনের হুমকি সংকট ও সমস্যাদি মোকাবেলা এবং দেশের সামগ্রিক জলসীমা ও এর সম্পদ রক্ষার্থে সেনা ও বিমান বাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী এবং অন্যান্য সমুদ্র ব্যবহারকারী সংস্থার সমন্বয়ে কার্যকারী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’
আলোচ্য সমুদ্র মহড়া ‘এক্সারসাইজ সেফ গার্ড- ২০১৮’ সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থা হতে সহযোগিতার ক্ষেত্রসমূহ বিবেচনা করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী : এক্সারসাইজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বে চট্টগ্রাম ও খুলনা নৌ এলাকায় এয়ার ডিফেন্সের জন্য এডি ইলামেন্টস মোতায়েন করা। আম্ফিবিয়াস অপারেশন পরিচালনায় প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র, সরঞ্জামাদি ও যানবাহন মোতায়েন করা। আম্ফিবিয়াস ল্যান্ডিং প্রতিরোধের জন্য ফিল্ড আর্টিলারি এবং ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারস মোতায়েন করা। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের জন্য ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্স ডিটাচমেন্ট প্রেরণের ব্যবস্থা করা। নৌবাহিনীর ল্যান্ডিং ক্রাফট কর্তৃক সেনাবাহিনীর ট্যাংক, এপিসি যানবহন ও ট্রুপস বহন করা।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী : সমন্বিতভাবে সমুদ্রে লক্ষ্য বস্তুতে আক্রমণ এবং প্রটেকশন অব ট্রান্সপোর্ট গ্রুপের জন্য কমব্যাট এয়ার পেট্রোল সহায়তা প্রদান। আম্ফিবিয়াস অপারেশন চলাকালীন ইয়ার সারপেরিওটি বজায় রাখার জন্য বিমান সহায়তা প্রদান।
নেভাল স্পেশিয়াল ফোর্সের মহড়া পরিচালনায় সহায়তা প্রদান করা। হেলিকপ্টারের সাহায্যে কমব্যাট সার পরিচালনা করা। মিসাইল ফায়ারিংয়ের সময় ফোটো রেইস করে বিডিএ প্রদান করা। অপোজহ বোর্ডিংয়ের সময় জিম্মি উদ্ধার কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা। হার্বোর ডিফেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা।
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড : দেশের জাতীয় দুর্যোগ এবং যুদ্ধ পূর্বাবস্থায় কোস্টগার্ডের অপারেশনাল কমান্ড নৌবাহিনীর উপর ন্যস্ত হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে এ মহড়ায় কোস্ট গার্ডের করণীয় বিষয়াদি নির্ধারণ করা সহজ হবে। মহড়ার বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য কোস্টগার্ড বাহিনী হতে সুবিধাজনক জাহাজ, ক্র্যাফট ও বোটের সহায়তার প্রয়োজন হবে।
ডিপার্টমেন্ট অফ শিপিং, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ, মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্ট এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন : সামুদ্রিক মহড়াটি চট্টগ্রাম মংলা ও পায়রা বন্দর প্রতিরক্ষা বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ অবস্থায় কোস্টগার্ড ডিপার্টমেন্ট অব শিপিং, চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ, মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্ট এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ও অন্যান্য সমুদ্র ব্যবহারকারী সংস্থাসমূহের সহায়তায় নোভাল কন্ট্রোল অব শিপিং পরিচালনা করা হবে।
এছাড়া চট্টগ্রাম, পায়রা ও মংলা বন্দর নিরাপদে ব্যবহারের জন্য এবং সি লাইনস অব কমিউনিকেশনের নিরাপত্তা বিধানে অন্যান্য প্রয়োজনীয় মহড়া পরিচালনা করা হবে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক জাহাজ, অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী জাহাজ ও মাছ ধরার ট্রলারের সহায়তা প্রয়োজন হবে। সমুদ্রে বিপদগ্রস্ত জাহাজকে সহায়তা প্রদানের জন্য ‘সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ’ মহড়া পরিচালনা করা হবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সমুদ্র ব্যবহারকারী সংস্থাসমূহ হতে মহড়া চলাকালীন বেশকিছু সহায়তার প্রয়োজন হবে।
এগুলো হলো- লজিস্টিকস সহায়তা প্রদানের জন্য ওয়াটার বার্জ। এজিআই হিসাবে একাধিক ফিশিং ট্রলার ও মাছ ধরার নৌকা। কোনভোয়িংয়ের জন্য বাণিজ্যিক জাহাজ, কোস্টার, লাইটের ভেসেল প্রভৃতি। সংশ্লিষ্ট বন্দর কর্তৃপক্ষ হতে উপযোগী ক্রাফট পাইলট বোর্ড।
‘এক্সারসাইজ সেফ গার্ড- ২০১৮’ এর উপর গত ২৯ অক্টোবর নৌসদর দফতরে ইনিশিয়াল প্ল্যানিং কনফারেন্স এবং গত ২০ ডিসেম্বর খুলনা নৌ এলাকায় ফাইনাল প্ল্যানিং কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া গত ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নৌ এলাকায় ফাইনাল প্ল্যানিং কনফারেন্সও অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও খুলনা নৌ অঞ্চলে যথাক্রমে কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল এবং কমান্ডার খুলনা নৌ অঞ্চলের তত্ত্বাবধানে ৩-৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দুদিনের একটি সেমিনার আয়োজন করা হয়।
‘এক্সারসাইজ সেফ গার্ড- ২০১৮’ মহড়া সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ নৌবাহিনী সংশ্লিষ্ট খাত থেকে বহন করা হবে। ‘এক্সারসাইজ সেফ গার্ড-২০১৭’ গত ১৪-৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মহড়ায় সর্বমোট এক কোটি নয় লাখ ৭৬ হাজার ৯৯২ টাকা খরচ হয়।
একই সঙ্গে চিঠিতে মহড়ার আয়োজন এবং বিভিন্ন পরিকল্পিত মহড়ায় সেনা, বিমান ও কোস্টগার্ড বাহিনী এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থার অংশগ্রহণের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও সরকারি আদেশ জারিরও অনুরোধ করা হয়।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন