হাওর এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই
সাস নিউজ: স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও হাওর এলাকায় কৃষিকাজ ও মাছ ধরা ছাড়া বিকল্প কোনও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি। হাওর এলাকা বছরের ছয় মাস জলমগ্ন থাকে। এ সময় বেকার দিনযাপন করেন লাখ লাখ তরুণ-তরুণী। তাই প্রতিবছর জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অদক্ষ বেকার জনগোষ্ঠী। বেকারদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোও নানা কারণে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে।
জেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে পুরো জেলায় বেকার তরুণ-তরুণীর সংখ্যা ছিল সাত লাখ। প্রতিবছর মোট জনসংখ্যার দুই ভাগ করে বেকার জনসংখ্যা বেড়ে বর্তমানে তা ৯ লাখে দাঁড়িয়েছে। জেলার মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ বেকারত্বের অভিশাপ বয়ে বেড়াচ্ছে।
ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর থানার মনধন মিয়া বলেন, ‘গেলবার গিরস্থি করছিলাম। কিন্তু আগাম বন্যায় ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এলাকায় কাজের বিকল্প কোনও উৎস নেই। তাই শহরে এসেছি কাজের খোঁজে।’
শহরতলির অচিন্তপুর গ্রামের জয়নাল মিয়া জানান, হাওরের মানুষ বছরে দুইবার কাজ পায়। একটি হলো শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজ, অন্যটি বর্ষায় হাওরের উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরা। এছাড়া গোটা হাওর এলাকায় বিকল্প কোনও কর্মসংস্থান নেই। তাই কাজের খোঁজে তারা বড় বড় শহরে ছুটে যান। কেউ কাজ পান আবার কেউ পান না।
কাজের সন্ধানে আসা কিশোর নবীন চন্দ্র দাস জানায়, গতবার ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তার মতো অনেক কিশোর লেখাপড়া বাদ দিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে কাজের খোঁজে শহরে এসেছে। সারাদিন কাজ করে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা রোজগার করা যায়।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার জলিলপুর গ্রামের সামরাজ মিয়া জানান, গতবার ধারদেনা করে কিছু জমিতে ধান লাগিয়ে ছিলেন। কিন্তু অকাল বন্যায় ধান তলিয়ে যাওয়ায় দিনমজুরি করা ছাড়া উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়ে কাজের জন্য শহরের এসেছেন।
জয়শ্রী গ্রামের মহেন্দ্র দাস বলেন, কাজের খোঁজে যারা শহরে আসেন, তারা একদিন কাজ পেলে তিন দিন পান না। বাকি সময় বাজারে বাজারে কাজের সন্ধানে ঘুরে ঘুরে কাটাতে হয়।
এদিকে, শহরের যুব উন্নয়ন অধিদফতরের প্রশিক্ষণার্থী জাবের আহমদ জানান, তিনি তিন মাসের একটি কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। ইতিমধ্যে দুই মাস চলে গেছে। কিন্তু প্রশিক্ষক সংকটের কারণে ঠিকমত প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন না।
প্রশিক্ষণার্থী রুবিনা আক্তার বলেন, ‘দুর্গম হাওর এলাকার বেকার তরুণীরা নানা সীমাবদ্ধতায় প্রশিক্ষণে আসতে পারেন না। হাওর এলাকার মেয়েদের গ্রামভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিতে পারলে অনেক উপকার হবে।’
জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের দাসনোয়াগাঁও গ্রামের তিতর মিয়া বলেন, প্রতিবছর সুনামগঞ্জ থেকে বেকার যুবকরা বিদেশে যায়। কিন্তু তাদের কোনও প্রশিক্ষণ না থাকায় বিদেশে গিয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারে না।
হাওরে হাঁস পালনসুনামগঞ্জ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের ব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, সুনামগঞ্জের উন্মুক্ত হাওর এলাকায় হাঁস পালন করে বেকারত্ব নিরসনের সুযোগ রয়েছে। হাওরের হাঁস প্রাকৃতিকভাবেই খাবার খেয়ে ডিম দিতে পারে। এজন্য খামারিদের শতকরা ২০ ভাগ খরচ হলেও লাভ হয় ৮০ ভাগ। তাই হাঁস পালন, সম্প্রসারণ ও প্রচারে অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
জেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. হারুন অর রশিদ খান বলেন, ‘বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি যুব উন্নয়ন অধিদফতরে আরও বেশি সংখ্যক প্রশিক্ষণার্থী যেন প্রশিক্ষণ নিতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। অধিদফতরের শূন্যপদগুলো দ্রুত পূরণ করতে হবে। এছাড়া বিদেশগামী যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ন্যাশনাল সার্ভিস চালু এবং বেশি বেশি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করলে হাওর এলাকার বেকার জনগোষ্ঠী সম্পদে পরিণত হবে।’
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন