স্মার্টফোন কিনতে ইউজিসির ঋণ : বঞ্চিত ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজ
নিউজ ডেস্ক: করোনাকালে অনলাইন শিক্ষার জন্য স্মার্টফোন (মোবাইল) কিনতে দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৪১ হাজার ৫০১ জন অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে বিনা সুদে আট হাজার টাকা করে ঋণ দেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ঋণের টাকা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর অথবা অধ্যয়নকালে মোট চারটি কিস্তিতে বা এককালীন পরিশোধ করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর দেশের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনলাইন ক্লাস শুরু করে ঢাকা কলেজ। প্রথমে উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস শুরু হলেও কয়েকদিনের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শুরু হয় অনলাইন ক্লাস। শুধু ঢাকা কলেজে নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের অন্যান্য কলেজগুলোতেও অনলাইন ক্লাস শুরু হয়।
তবে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর হাতে স্মার্টফোন (মোবাইল) নেই বলে তারা অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। সুবিধা না পাওয়া এসব শিক্ষার্থী বলছেন, করোনায় এমনিতেই শিক্ষার অনেক ক্ষতি হচ্ছে, তারপর অনলাইন ক্লাস করতে না পারায় অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়ছেন তারা।
ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন আল মামুন বলেন, ‘করোনার মধ্যে পুরোটা সময়ই বাড়িতে। মোবাইল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আর কিনতে পারিনি। অনলাইন ক্লাসও করতে পারছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের সমন্বয়ক ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার গত ৩ ডিসেম্বর অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য ফেসবুকে এক জরুরি নির্দেশনা দেন। ওই নির্দেশনায় তিনি অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে সিলেবাস শেষ করতে অনেকটা সফল বলে দাবি করেন।
এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে যাতে পরীক্ষা শুরু করা যায় তার জন্য পরীক্ষা কমিটি গঠন, প্রশ্ন প্রণয়ন, রুটিন তৈরি ও ফরম পূরণসহ সবকিছুর প্রস্তুতি বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্মার্টফোন না থাকার কারণে তারা প্রথম থেকেই অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না। আর যাদের কাছে স্মার্টফোন আছে তাদের অনেকেই আবার ইন্টারনেটের অধিক মূল্য ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিম্নগতির ইন্টারনেট থাকায় ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না। শিক্ষার্থীদের দাবি, এসব সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে তারা অনলাইন ক্লাসে অংশ নিয়ে উপকৃত হতে পারবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফেরদৌসী খান
বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থেকেও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা দরিদ্র। আমরা সব শিক্ষার্থীদের হলে আবাসন সুবিধা দিতে পারি না। তারা মেসে থেকে পড়ালেখা করে। ঢাবি শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা পেলে আমাদের শিক্ষার্থীরাও পাবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।’
ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, ‘ইউজিসির সাথে ঢাবির একটা চুক্তি আছে, ওই চুক্তির ফলে তারা এটা করতে পারছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের কীভাবে এই সুবিধার আওতায় আনা যায় বিষয়টি নিয়ে আগামী মিটিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলবো।’
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় বিবেচনায় নেয়নি। এটি নিয়ে আমাদের উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) কাজ করছেন। উনারা কী করেছেন, আমি জানি না। আমি এটার সাথে যুক্ত নই। আমার বলাতে কিছুই হবে না। এখতিয়ারের বাইরে আমি কথা বলি না।’
এ বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন