স্থানীয়দের জমি দখলের অভিযোগ, নদী তীরের ওয়াকওয়ে নির্মাণ বন্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক: স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধায় বন্ধ হয়েছে তুরাগ নদীর ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ। নদীর জমিকে নিজেদের দাবি করে ক্ষতিপূরণ চাইছেন তারা। এর পেছনে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। তবে বিআইডব্লিউটিএ বলছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকেই তারা নদী পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করছে। এসময় সব বৈধ কাগজপত্র যাচাই করা হয়েছে। সীমানা পিলার স্থাপনের সময় যারা বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পেরেছেন তারা ছাড় পেয়েছেন। এখন যারা বাধা দিচ্ছেন তারা বৈধ মালিক নন। ওই জমি নদীর। যারা কাজে বাধা দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ঢাকার চারপাশের চার নদী রক্ষায় ২০১৮ সালে সীমানা পিলার ও ওয়াকওয়ে নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এজন্য ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ১৮১ কোটি টাকা। এরইমধ্যে তুরাগ পাড়ের একাংশের সীমানা পিলার সম্পন্ন হলেও উত্তরখানের মাউসাইড এলাকার ৩.৬০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ স্থানীয়দের নিয়ে বন্ধ করে দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাইদুল ইসলাম মোল্লা। এই অংশের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। চলতি বছরের আগস্ট মাসে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা।
বিষয়টি উল্লেখ করে গত ১৭ জানুয়ারি উত্তরখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন প্রকল্প পরিচালক ও বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু জাফর মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ কবির। এতে তিনি উল্লেখ করে বলেন, উচ্চ আদালতের রিট পিটিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ‘বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের’ আওতায় ঢাকার চারদিকের বৃত্তাকার নৌপথের উভয় তীরে নদীর সীমানা পিলার এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। সম্প্রতি মোশাইদ এবং উত্তরখান মৌজায় নির্মিত নদীর সীমানা পিলারের অভ্যন্তরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজে কতিপয় ব্যক্তি বাধা প্রদান করছে।
জিডিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, এতে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক একনেক সভায় অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় সরকারি উন্নয়নমূলক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর আগে ওই এলাকায় নদীর সীমানা পিলার নির্মাণের সময় বাধা প্রদান করার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উত্তরখান থানায় মামলা করা হয়। মামলায় এজাহার-প্রাপ্ত আসামিরা ব্যক্তিগত আক্রোশে উপরোল্লিখিত সরকারি কাজে বাধা প্রদান করছে মর্মে মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়।’
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রকল্প এলাকায় ঠিকাদারের নির্মাণ সামগ্রীÍইট-পাথর, রড-সিমেন্ট ও বালু পড়ে রয়েছে। কিছু নির্মাণ শ্রমিক এসব পাহারা দিচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসীরা এসে তাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় এসে মাঝেমধ্যে হামলা করে।
তবে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ, ওই জমির মালিক তারা। বিআইডব্লিউটিএ জোর করেই তাদের জমির উপর সীমানা পিলার স্থাপন করেছে। তাদের সব ধরণের খাজনা পরিশোধ রয়েছে। সরকার যদি এই জমি নিয়ে যেতে চায় তাহলে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সামছুল ইসলাম বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকেই এই জমি ভোগ-দখল করে আসছি। এখন শুনতেছি জমি নাকি নদীর। তাহলে কি আমাদের কাগজপত্র ভুয়া? যদি তা না হয় তাহলে সরকার আমাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করে নিতে পারে।’ সীমানা পিলার স্থাপনের সময় কেন এই অভিযোগ করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তখন বলা হয়েছে আমাদের কাগজপত্র নাকি সঠিক নয়। সেকারণে আমরা তখন বাধা দেইনি।
কাজ বন্ধ থাকায় বিআইডব্লিউটিএ’র কাছে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি উল্লেখ করে আবেদন করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএসআর গ্রুপ। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী রকিবুল আলম দিপু বলেন, ‘আমি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ পেয়ে কাজ বাস্তবায়ন করতে যাই। কিন্তু সেখানে বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমি বিআইডব্লিউটিএতে অভিযোগ দিয়েছি। তারা থানায় সাধারণ (জিডি) ডায়েরি করেছেন। কিন্তু এখন আমি কাজ করতে পারিছি না। স্থানীয়রা বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। নির্মাণ সামগ্রী ভাড়া, শ্রমিকের বেতনসহ প্রতিদিন আমার কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এই অর্থ আমাকে কে দিবে?
তিনি আরও বলেন, নদীর তীর চিহ্নিত করে সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। আমরা পিলারের বাইরে দিয়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করছি। এখন তারা বলছে, এটা তাদের সীমানার মধ্যে। তাহলে সীমানা পিলার যখন গাড়া হয় তখন তারা বাধা দিলো না কেন? সীমানা পিলার স্থাপনের সময় সুযোগ দেওয়া হয়। তখন অনেকেই সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। যারা কাগজপত্র দেখিয়েছে তারা ছাড় পেয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাউন্সিলর জাইদুল ইসলাম মোল্লাকে ফোন করা হলে তিনি অভিযোগটি শোনেন এবং গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় জানার পর ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
প্রকল্প পরিচালক আবু জাফর মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ কবির বলেন, যারা সরকারি কাজে বাধা দিয়েছে তাদের বিষয়ে পুলিশকে জানানো হয়েছে। থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন