সিলেটের কমলার সুদিন ফিরছে
সিলেট সংবাদদাতা: বর্তমানে সিলেটের কমলা বাগানগুলো রীতিমতো ধুঁকছে। এর পেছনে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া বড় একটি কারণ। একই সঙ্গে প্রতিকূল আবহাওয়া, পাহাড় ও টিলায় কমলা চাষের আওতায় জমি কমে আসার প্রভাবও রয়েছে। সর্বোপরি সিলেট অঞ্চলের চাষী ও বাগানিদের কাছে কমলার পরিবর্তে অন্যান্য ফল-ফসল আবাদ বেশি লাভজনক মনে হওয়ায় এ অঞ্চলে ফলটির উৎপাদন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
উৎপাদন কমে আসায় সিলেটি কমলার বদলে এখন চীন, ভারত, ভুটান, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা কমলায় বাজার সয়লাব। আমদানি করা এসব কমলার দামও দেশে উৎপাদিত কমলার তুলনায় কম। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতা সবার আগ্রহের কেন্দ্রে এখন আমদানি করা কমলা। প্রতিযোগিতামূলক বাজারেও ক্রমে পিছিয়ে পড়ছে সিলেটের কমলা। আর্থিক লোকসানের আশঙ্কায় সিলেটের কৃষকরাও কমলা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
চলতি শতকের শুরুতে সিলেটের কমলার হারানো আবেদন ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়। ওই সময় ‘বৃহত্তর সিলেট সমন্বিত কমলা চাষ উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ২০০১ সালে চালু হওয়া আট বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের সুফলও মেলে দ্রুত। সরকারি এ প্রকল্পের আওতায় সিলেট বিভাগের চার জেলায় ২৫০টি কমলা বাগান করা হয়। প্রশিক্ষণ দেয়া হয় পাঁচ হাজার কমলাচাষীকে। প্রকল্পের শুরুতে সিলেটে সাকল্যে ২৮২ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হতো। প্রকল্পে সুবিধা নিয়ে কমলা চাষের আওতায় জমি বাড়িয়ে ৫১০ হেক্টরে উন্নীত করা হয়।
২০০৮ সালের জুনে সরকারি এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। ওই সময় স্থানীয় চাষী ও বাগানিরা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি তুলেছিলেন। তবে মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। এ নিয়ে দীর্ঘদিন কৃষি অধিদপ্তর ও সিলেটের কমলাচাষীদের মধ্যে দেনদরবার হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়ায় ফের কমলা চাষে আগ্রহ হারাতে শুরু করেন সিলেটের চাষীরা।
তবে দেরিতে হলেও এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত বছরের শেষ সময়ে সিলেট অঞ্চলে কমলাসহ লেবুজাতীয় ফলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ‘লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প’-এর আওতায় সিলেট ও মৌলভীবাজারের নয় উপজেলায় কমলা উৎপাদন বাড়াতে কাজ করা হবে। প্রকল্পটি চলবে ২০২৩ সাল পর্যন্ত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, সিলেটের কমলা উৎপাদন খাতের উন্নয়নে দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় পর নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট, বিশ্বনাথ, গোলাপগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও বিয়ানীবাজার এবং মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি, বড়লেখা, শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া এ নয় উপজেলায় প্রকল্পের কাজ চলবে। সিলেট অঞ্চলের এসব উপজেলায় কমলাসহ লেবুজাতীয় ফল সবচেয়ে বেশি জন্মে।
মূলত স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে কমলার আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনা, কৃষকদের আয় বাড়ানো, নতুন বাগান তৈরি করা, পুরনো বাগানগুলো ঢেলে সাজানো এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এর মধ্য দিয়ে সিলেট অঞ্চলে ফলটির উৎপাদন ১৫-২০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ লক্ষ্য পূরণে কমলাচাষীদের প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চালানো হবে। একই সঙ্গে সিলেট ও মৌলভীবাজারের দুটি হর্টিকালচার সেন্টারে উন্নত মানের চারা উৎপাদন ও এখান থেকে পুরো অঞ্চলের চাষীদের তা সরবরাহ করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক এমএম ইলিয়াস বলেন, সিলেট অঞ্চলে কমলার উৎপাদন বাড়াতে আগের প্রকল্পটিতে অনেক সুফল মিলেছিল। আট বছরের প্রকল্প মেয়াদে ফলটির উৎপাদন বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছিল। তবে এ খাতে দীর্ঘদিন ধরে কোনো কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় ফলনে ভাটা পড়তে শুরু করেছিল। এখন সরকারের পক্ষ থেকে নতুন আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নতুন এ প্রকল্পে কমলার পাশাপাশি লেবুজাতীয় অন্যান্য ফল উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। সিলেট অঞ্চলের চাষীদের আয় বাড়াবে।
তিনি আরো বলেন, এখনো চেষ্টা করলে সিলেটের কমলার ঐহিত্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এজন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি চাষীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া প্রত্যেকের বসতবাড়ির আঙিনায়ও কমলার চারা রোপণ করা যেতে পারে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন