সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে কৃষি ও কৃষকের
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশজুড়ে প্রায় অবরুদ্ধ অবস্থায় সবচেয়ে বড় বিপদে পড়েছেন দেশের অর্থনীতির মূল নিয়ামক কৃষি ও কৃষক। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকের চলমান এ পরিস্থিতির আঘাত মারাত্মক। তবে রপ্তানিমুখী শিল্প-বাডুজ্য নিয়ে সরকারী মহলের উদ্বেগ দেখা গেলেও কৃষি ও কৃষকের সমস্যা ও দুর্দশার ব্যাপারে রাষ্ট্রযন্ত্র নীরব। গণপরিবহন, রেল যোগাযোগ ও নৌপরিবহন বন্ধ থাকায় কৃষিজাত পণ্য তথা কৃষকের যে ক্ষতি, তা অপরিমেয়।
একটি দেশের জাতীয় অর্থনীতির জন্য শিল্প বা রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ হলেও এগুলো স্থায়ী কোন ব্যবস্থা নয়। আমাদের অর্থনীতি মূলত দাঁড়িয়ে আছে কৃষির ওপর। কৃষি স্থায়ী একটি ভিত।
মানুষ খেয়ে-পরে বেঁচে আছে গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মতৎপরতার ওপর নির্ভর করে। দেশের ৭০-৭৫ ভাগ মানুষ ডিম ও হাঁস-মুরগির গোশত খেতে পেত না, যদি গ্রামের একশ্রেডুর খুদে উদ্যোক্তা পোলট্রি খামার না করতেন। একদিকে বেকারত্ব কমেছে, অন্যদিকে প্রোটিনের বা আমিষজাতীয় খাদ্যের অভাব কমেছে।
ব্রয়লার মুরগি বিক্রির একটা নির্দিষ্ট সময় আছে, তার বেশি দিন হলে খাবারের অনুপযোগী হয়ে যায়। পরিবহনের অভাবে পোলট্রি খামারের মালিকেরা বাজারজাত করতে পারছেন না। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা কঠিন হবে। ছোট ছোট ডেইরি ফার্ম করেছেন অনেকে। তারাও সংকটে। গোখাদ্যের অভাব। এক বোঝা খড়ের দাম ছয় হাজার টাকা। গরুর দুধ কেনার ক্রেতা নেই। যে দুধ করোনার আগে ছিল ৬০-৭০ টাকা লিটার, এখন তা ২০-২৫ টাকা দরেও ক্রেতা পাওয়া যায় না। মিষ্টির দোকান বন্ধ।
বড় ধরণের ক্ষতি হচ্ছে সবজি চাষিদের। সরকার যদি ট্রাকে বিভিন্ন জেলা থেকে তরিতরকারি ঢাকা ও বড় শহরে এনে বস্তিবাসী ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে চাল-ডালের মতো বিতরণ করত, কৃষকেরা কিছুটা উপকৃত হতেন এবং সবচেয়ে বেশি উপকার হতো উপার্জনহীন দরিদ্র গৃহবন্দী মানুষের।
সবজি সংরক্ষণের জন্য ‘হিমাগার’ তৈরিতে সরকার দৃষ্টি দেয়নি। সরকার কয়েক শ কোটি টাকা হিমাগার তৈরিতে বরাদ্দ দিলে অর্থনীতিতে যোগ হবে হাজার হাজার কোটি টাকা। ক্ষতি পোষাতে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করেছে। কিন্তু কৃষি খামারিদের যে ক্ষতি হলো, তার জন্য কোনো তহবিলের কথা শোনা যায়নি।
ধান কেনার মৌসুমে মাঝারি ও ছোট কৃষকরা সরকার-নির্ধারিত ধানের দাম পান না। ধার-দেনা করে তারা চাষ করেন। ফসল ঘরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কম দামে বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেন। চালকল মালিকেরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কম দামে ধান কিনে মজুত করেন। অভ্যন্তরীণ ধান-চাল সংগ্রহের জন্য সরকার চালকল মালিকদের ওপর নির্ভরশীল। জাতীয় খাদ্যনীতিতে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাজার থেকে খাদ্যশস্য কেনার বিধান থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা দেশে অবরোধ চলছে, সবাই ঘরে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছে, কৃষক বসে নেই। কৃষক বসে থাকলে আগামী বছর না খেয়ে থাকব। তাই কৃষকের কর্মবিরতি নেই। তাকে ভোরে উঠে জমি তৈরি করতে হয়। খেতে সার দিতে হয়। সেচের পানি দিতে হয়। যে শস্য তোলার সময় হয়েছে, তা ১৫ দিন ফেলে রাখা যাবে না। কৃষকের সমস্যাকে গুরুত্ব না দিলে তা হবে জাতির জন্য আত্মঘাতী।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন