শর্ত মেনে রাস্তায় বাস নামাতে চান না মালিকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বঙ্গবাজার ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সোজা কাপ্তান বাজার অভিমুখী রাস্তার দু’ধারে গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে সারিবদ্ধভাবে থেমে আছে বিভিন্ন রুটের কয়েকশ বাস। তবে ৩১ মে থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে সীমিত আকারে গণপরিবহন চলাচল শুরু হবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে আগামী ১৫ দিন সীমিত পরিসরে গণপরিবহন পরিচালনা করতে হবে-এই শর্তে গাড়ি চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার।
তবে এ সিদ্ধান্তে খুশি নন গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। তারা বলছেন, প্রতিদিন রাস্তায় গাড়ি নামলেই ড্রাইভার ও হেলপারের বেতন, তেল খরচ , যন্ত্রপাতি মেরামত বাবদ একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা খরচ হয়। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে বিভিন্ন চাঁদা পরিশোধ করতে হয়। এসব খরচ মেটাতে স্বাভাবিক সময়ে তারা আসনে যাত্রী বসানোর পরও বাসে দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করে থাকেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে গিয়ে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গাড়ি চালালে তাদেরকে প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হবে। এ কারণে সীমিত আকারে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি পাওয়ায় তারা খুশি নন। তারা জানতে চান, এ ক্ষতি পোষাবে কীভাবে?
বঙ্গবাজারের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, কিছু কিছু বাস সড়কে নামানোর জন্য প্রস্তুতি চলছে। দুই মাসেরও বেশি সময় বাসস্ট্যান্ডে পড়েছিল গাড়ি। তাই এই দুই মাস গাড়ি স্টার্ট না দেয়ায় গাড়ির ইঞ্জিন ঠিক আছে কি-না তা নিশ্চিত হতে দীর্ঘক্ষন গাড়ি স্টার্ট দিয়ে রেখেছেন চালকরা। পরিবহন শ্রমিকদের কেউ কেউ চাকার নাট-বল্টু সহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন।
ঢাকা-মানিকগঞ্জ রোডে শুভযাত্রা পরিবহন শ্রমিক সমিতির নেতা পরিচয়ে সাইদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি জানান, গত দুইমাস গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পরিবহন শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করেছে। সরকার ৩১ মে থেকে শর্ত মেনে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিলেও এ সিদ্ধান্তে মালিক-শ্রমিকরা খুশি হতে পারেনি।
তিনি বলেন, ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জের যাত্রীপ্রতি ভাড়া ১০০ টাকা। বাসে আসন সংখ্যা ৪০টি। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হলে অর্ধেক সংখ্যক আসনে অর্থাৎ ২০ জন যাত্রী পরিবহন করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রতি ট্রিপে আগে চার হাজার টাকা পেলেও এখন সে আয় দুই হাজার টাকায় নেমে আসবে। ফলে তাদের লাভ তো দূরের কথা, তেল খরচ উঠবে না। এক্ষেত্রে বাস মালিকরা ভাড়া বৃদ্ধি করলে যাত্রীরা অভিযোগে লিপ্ত হবেন।
সাইদুর রহমান জানালেন, এসব নানা দিক বিবেচনায় সরকারি নির্দেশনা মেনে তাদের অনেকেই লোকসানের কথা চিন্তা করে আপাতত গাড়ি রাস্তায় না নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কয়েকজন বাসচালক ও হেলপার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার দেশের অনেক নিম্নআয়ের মানুষের জন্য খাদ্য সাহায্য আর্থিক সহায়তা দিলেও পরিবহন শ্রমিকরা কিছুই পায়নি। যখন বাস চলাচল করত তখন যারা নিয়মিত চাঁদা উঠাতেন তারাও পাশে দাঁড়াননি। এখন সরকার গণপরিবহন চলাচলের ঘোষণা দেয়ার পর তাদের কারো কারো চেহারা দেখা যাচ্ছে। তারা বলেন, সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল করলেও এসব চাঁদাবাজরা যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি শুরু করবেন। এসব কারণে তারা চিন্তায় রয়েছেন।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন