শখ থেকে সফলতা
নিউজ ডেস্ক: শখের বশে মাত্র ১০ কাঠা জমিতে মাল্টা চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তরুণ কৃষক মারুফ হোসেন। এখন তিনি বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেছেন মাল্টার চাষ। এলাকার বেকার যুবকদের কাছে মডেল তিনি। তার কাজে অনুপ্রেরণা পেয়ে অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। করেছেন নতুন করে মাল্টা বাগানও। চাষের ক্ষেত্রে লোকসানের ঝুঁঁকি নেই, বাজারে দেশীয় মাল্টার চাহিদাও ভালো, খেতেও খুব সুস্বাদু হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে জনপ্রিয় হচ্ছে বারি-১ জাতের মাল্টার চাষ। অনেকেই বাড়ির ছাদে, বসতবাড়ির আঙিনায় শখের বশে করছেন এ মাল্টার চাষ। পরিচর্যা নেই বললেই চলে; তাই খরচও কম। আর কম সময়ে, স্বল্পপুঁজিতে এ মাল্টা চাষ বিস্তার লাভ করছে কুষ্টিয়ার মিরপুরের যুবকদের মধ্যে। কৃষক মারুফ লাভবান হওয়ায় ১০ কাঠা থেকে আরও ৩ বিঘা জমিতে করেছেন মাল্টার বাগান। সরেজমিন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নের আশাননগর এলাকার কৃষক মারুফের মাল্টা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি গাছেই থোকায় থোকায় ধরে আছে মাল্টা, এতে বেশ খুশি তিনি।
মারুফ হোসেন বলেন, মাল্টা চাষ আমাদের এলাকায় করা সম্ভব, এটা কখনও ভাবিনি। ভাবতাম এ মাল্টার চাষ কীভাবে করা যায়, কীভাবে একটা বাগান করা যায়। ২০১৭ সালে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে ৫০টি বারি-১ জাতের মাল্টার চারা পাই। সেগুলো নিয়ে এসে ১০ কাঠা জমিতে রোপণ করি। মাল্টা গাছের তেমন একটা পরিচর্যা করিনি। এখানে মাল্টা গাছের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে মরিচ, বেগুন, খেসারি, জব ও কলার চাষ করেছি। মাল্টার জন্য আলাদা কোনো পরিচর্যা বা সার দেওয়া লাগেনি। ২ বছর পর লক্ষ করি বেশ কয়েকটি গাছে মাল্টা ধরেছে। বেশ সুন্দর সবুজ মাল্টা, খেতে বাজারের মাল্টার চেয়েও সুসাদু এবং রসাল। এরপর চিন্তা করি মাল্টা গাছগুলোর যতœ নিলে আরও ভালো কিছু হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ৪৬ গাছে মাল্টা এসেছে। একেকটি গাছে প্রায় ১ মণ করে মাল্টা ধরেছে। কিছু গাছে তার চেয়েও বেশি। মাল্টার সাইজও তুলনামূলক বড়। ১০০ থেকে ২৫০ গ্রাম। এ বছর প্রায় ৫০ মণের মতো মাল্টা পাব। এরই মধ্যে বাগান থেকে মাল্টা বিক্রি শুরু করেছি। ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি হিসেবে পাইকারিভাবে ক্রেতারা মাল্টা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে আশা করছি আড়াই লাখ টাকার মতো মাল্টা বিক্রি করতে পারব।
মাল্টা গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, মাল্টা গাছের খুব একটা পরিচর্যা করতে হয় না। বাগানটা পরিষ্কার রাখলে ফল বেশি আসে। আর মাঝেমধ্যে পোকা খাওয়া ও পাতা কোকড়ানো রোগ দেখা যায়। সেক্ষেত্রে কৃষি অফিসের পরামর্শ গ্রহণ করে ভালো ফল পেয়েছি।
মারুফ হোসেন আরও বলেন, কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন মাল্টার চারা উৎপাদন করি। এখান থেকে চারা বিভিন্ন এলাকার লোকজন নিয়ে যান। আগামীতে নিজে আরও বেশি বাণিজ্যিকভাবে মাল্টার বাগান করব বলে মনে করছি। দেশি বাদামের চারার সঙ্গে মাল্টা গাছের সায়নের কলম করি। এতে উৎকৃষ্ট মানের চারা উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতিটি কলমের চারা আমরা ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করি। এ বছর এখানে ১ হাজার মাল্টার চারা তৈরি করা হয়েছে, যা এরই মধ্যে বিক্রি শুরু করেছি। মারুফের সাফল্য দেখে ওই এলাকার অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখিয়ে শুরু করেছেন এ মাল্টার চাষ। সম্ভাবনাময় এ মাল্টা চাষ বৃদ্ধির জন্য এবং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যুবকদের ও আগ্রহীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এ চাষে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলায় এ বছর ১১ হেক্টর জমিতে বারি-১ জাতের মাল্টার চাষ করা হয়েছে। মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, কুষ্টিয়া অঞ্চলের মাটিতে মাল্টা চাষ করা সম্ভব। বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ করে অনেকেই বেশ সাফল্য পেয়েছেন। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের এ মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। পুষ্টি গুণাগুণ এবং স্বাদ ভালো হওয়ায় বাজারে দেশীয় এ মাল্টার চাহিদা বেশ ভালো। আমরা মাল্টা চাষের জন্য কৃষক মারুফকে উৎসাহ দিয়েছিলাম, বিনামূল্যে চারাও দিয়েছিলাম। তার সাফল্য দেখে অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখিয়েছেন। আশা করছি আগামীতে মাল্টা চাষ এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করবে। এতে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন অনেকেই।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন