লকডাউনে সর্বস্বান্ত পদকপ্রাপ্ত কৃষকরাও
নিজস্ব প্রতিবেদক: লকডাউন আর সরকারী নানা বিধি-নিষেধে নিঃস্ব হয়ে গেছেন জাতীয় কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত ও সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কৃষকরা। এদের মধ্যে এমন কৃষক আছেন যারা বলছেন, এবার যে ক্ষতি হয়েছে, তা সামাল দিয়ে ওঠা খুব কঠিন কাজ। পরবর্তী আবাদ করার মতো টাকাও অনেকের নেই।
তারা বলছেন, একের পর এক সঙ্কটে কোটি কোটি টাকার সবজি খেতে নষ্ট হয়ে গেছে। লকডাউনের কারণে পরিবহন বন্ধ হয়ে থাকায় সবজি বিক্রি করতে পারেনি তারা। তাই সরকার যদি এই মুহূর্তে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা না নেয় তাহলে অনেক কৃষক চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
কৃষকরা জানিয়েছে, লকডাউনে এ দেশের সবজি চাষিসহ সকল কৃষকরাই চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা বলছেন, এসব কারণে অনেক কৃষকেরই আর ঘুরে দাঁড়ানোর মতো সামর্থ্য নেই।
জাতীয় কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন কৃষক জানান, আবাদের ফসল ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, চিচিংগা, ঝিঙে, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, কদুসহ অনেক রকম সবজি লকডাউনের সময় বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারিনি। পরে ডিসি এবং ইউএনওকে ত্রাণ হিসেবে বিলি করা জন্য এসব সবজি দিয়ে দিয়েছি। গত তিন মাসে সবজি আবাদ থেকে আমার প্রায় ২৭ থেকে ২৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি জীবনে কোনোদিন লোন পাইনি। যতদূর এসেছি নিজের চেষ্টায়। আমার কোনো মামা-খালু নেই প্রশাসনে। কোন কৃষক লোন পেয়েছে এটা আমার জানা নেই। তবে যারা কৃষির জন্য লোন পায় তারা জীবনে কখনও কোনো জমিতে যায় না।
তিনি বলেন, এক লাখ ২০ হাজার টাকা শ্রমিকের মজুরি বাবদ বাকি আছে। আমি সেটাও দিতে পারিনি। কলার বাগানে কলাগাছ ভেঙে যে ক্ষতি হয়েছে সেটা সাফ (পরিষ্কার) করতেও আমার লাখ টাকা খরচ হবে। পরবর্তী ফসল করার মতো কোনো টাকা আমার হাতে নেই।
পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার আরেক কৃষক জাহিদুল ইসলাম জানান, ভালো নেইরে ভাই। একজন কৃষকের কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার পরে কি কেউ ভালো থাকতে পারে? উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দেন। তিনি বলেন, প্রথম সর্বনাশ করেছে লকডাউন। সবজি বিক্রির কোনো পথ ছিল না। খেতেই পচে গেছে লাখ লাখ টাকার সবজি।
কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, এবার সবজি চাষে আমার এক কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। এবারও ১০০ বিঘা জমিতে গাজর ছিল। এ গাজর মানুষ তুলে তুলে খেয়েছে আর গরু খেয়েছে। ৩০ বিঘা জমিতে টমেটো করেছিলাম। কিছুদিন বিক্রির পরেই গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। এছাড়া ১২০ বিঘা জমিতে মুলা, করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, চিচিংগা, ঝিঙে, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, কদু, শালগমসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির আবাদ করেছিলেন তিনি। প্রণোদনা বা তালিকা তৈরি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে এই কৃষক বলেন, আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী আসেনি। তবে আমার স্ত্রীর গরুর খামার দেখার জন্য একজন কর্মচারী এসেছিল। তার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে গেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার ডিগ্রি গ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এক কৃষক জানান, পদক দিয়ে পরস্কৃত করা হয়েছে কিন্তু কৃষকের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে এখন মনে হচ্ছে, পুরস্কার নয় তিরস্কার’ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন যে, এক ইঞ্চি জায়গা ফেলে বা খালি রাখা যাবে না। উনি এ কথা বোঝেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যারা থাকেন এবং যারা এটা বাস্তবায়ন করবেন তারা তো বোঝে না। কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল করে দাম পায় না। শাকসবজি আবাদ করে সেগুলো বাজারে বিক্রি করা যায় না। লকডাউনে ফসলের ক্ষতি হলে সেগুলো দেখার কেউ থাকে না।
তিনি বলেন, কৃষক আবাদ করেছিল কিন্তু কীভাবে তরমুজ, বাঙ্গী, সবজি নষ্ট হয়ে গেল! আমার খেতে সবজি ছাড়াও লিচু গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এমনিভাবে হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন কষ্টে জীবনযাপন করছেন। কিন্তু প্রশাসনের একটি লোকও তাদের খবর নেয় না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কৃষকের কোনো অভিভাবক নেই।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন