লকডাউনে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির একটি খন্ডচিত্র
নিজস্ব প্রতিবেদক: লকডাউনের কারণে কত বড় ধরণের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত প্রতিবেদনে লকডাউনে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ৩৩০০ কোটি টাকা। সে হিসেবে ৬৫ দিনেই লকডাউনে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় কমপক্ষে সোয়া ২ লক্ষ কোটি টাকা।
প্রকৃতপক্ষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যে আরো বেশ কয়েকগুণ বেশি, তার প্রমাণ মেলে অর্থনীতির বিশেষ ১৫টি সেক্টরের ক্ষতির হিসেব করে। যেমন-
১) ১ মাসে রিকশা ও ভ্যান চালকদের ক্ষতি ৬৮৫ কোটি টাকা। তাহলে দুই মাসে ক্ষতি- ১৩৭০ কোটি টাকা।
২) সড়কে দৈনিক ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা। তাহলে ৬৫ দিনে ক্ষতি- ৩২ হাজার কোটি টাকা।
৩) পল্ট্রি শিল্পে ১ মাসে ক্ষতি ২৫০০ হাজার কোটি, তাহলে ২ মাসে ক্ষতি ৫ হাজার কোটি
৪) বিদ্যুৎ খাতে ক্ষতি- ৪০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
৫) ১ মাসে পর্যটন খাতে ক্ষতি ৫৭০০ কোটি, ২ মাসে ক্ষতি ১১৪০০ কোটি টাকা।
৬) লঞ্চ মালিকদের ১ মাসে ক্ষতি ৩১০ কোটি, তাহলে ২ মাসে ক্ষতি ৬২০ কোটি।
৭) ৫৬ লাখ ক্ষুদ্র ব্যসায়ীর প্রতিদিন ক্ষতির পরিমাণ ১১০০ কোটি টাকা, তাহলে ৬৫ দিনে ক্ষতি- ৭১৫০০ কোটি টাকা।
৮) রেলে এক মাসে ক্ষতি পৌনে ২শ’ কোটি, তাহলে ২ মাসে ক্ষতি- ৩৫০ কোটি টাকা।
৯) স্টিল শিল্পে ১৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি
১০) নির্মাণখাতে ক্ষতি ২৩ হাজার কোটি টাকা।
১১) অ্যাভিয়েশন শিল্পে ক্ষতি ২১০০ কোটি টাকা
১২) ডেইরি শিল্পে দৈনিক ক্ষতি ৫৭ কোটি টাকা। ৬৫ দিনে ক্ষতি ৩৭০০ কোটি টাকা।
১৩) দোকান মালিক সমিতি দৈনিক ক্ষতি ১০৭৪ কোটি টাকা।
তাহলে ৬৫ দিনে ক্ষতি প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা।
১৪) ফার্নিচার শিল্পে ১ মাসে ক্ষতি ৫০০ কোটি
তাহলে ১ মাসে ক্ষতি- ১ হাজার কোটি টাকা
১৫) ব্যাংকিং খাতে ক্ষতি ১৪ হাজার কোটি টাকা।
এই ১৫ সেক্টরে ২ মাসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা। এই সেক্টরগুলো ছাড়াও আরো অনেক সেক্টর আছে (যেমন- বৃহৎ কলকারখানা, পচনশীল সবজি, শিক্ষা সেক্টর) যার ক্ষয়ক্ষতির হিসেব এখনো করা হয়নি। সবগুলো হিসেব করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বিশাল। বিশেষ করে যেহেতু রোজা ও ঈদের অর্থনীতি একটি বিরাট অর্থনীতি, তাই ঈদ-রোজায় বন্ধ থাকায় এই ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নিশ্চিত অনেক বড় হবে। আবার অনেক অদৃশ্যও ক্ষতিও আছে। যেমন- ২ মাস বন্ধ থাকায় অনেক বাস, টেম্পু, রেলের ইঞ্চিন অকেজো হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। ফলে সব হিসেব করলে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব কোথায় গিয়ে ঠেকে তা বোঝা মুশকিল।
যদিও বলা হচ্ছে, সরকার ৭২ হাজার কোটি টাকা প্রনোদনা দিবে। কিন্তু এই ৭২ হাজার কোটি টাকা কিন্তু ঋণ হিসেবে হিসেবে দেয়া হচ্ছে।
সরকারীভাবে কৃষি খাতকে বিশেষ জোর দেয়া হলেও ফসল সংগ্রহ ও বাজারজাত নিয়ে কৃষকরা বেকায়দায় রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, লকডাউনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিসহ ব্যবসা বাণিজ্যে। এ অবস্থায় সব ধরনের কল-কারখানাসহ বাইরের সব কাজকর্ম কোথাও বন্ধ রয়েছে, কোথাও সীমিত হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, ২০১৮-২০১৯ সালের জিডিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে স্বল্পমেয়াদি বা চলতি ক্ষতির পরিমাণ কত হবে তা হিসাব করার একটা প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। অর্থনীতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট থাকে। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি কিছুটা উৎসব কেন্দ্রিক। যেমন- রোজা, ঈদ। এ বছর এগুলো জমে উঠেনি। ফলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বড়। এই ক্ষতির পরিমাণ লকডাউন অবস্থার মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে পারে, যা প্রতিবেদনে এই মুহূর্তের হিসাব করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের লাভের ক্ষতি যদি ধরা হয়, তারা গড়ে ২০ হাজার টাকা করে বিক্রি করলে, আমাদের ৫৬ লাখ ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন ১১০০ কোটি টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর তথ্যমতে, লকডাউনে সড়কপথে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকার মতো। এ হিসাবে গত প্রায় এক মাসে ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড শিপবিল্ডার্স ইন্ডাস্ট্রিজের দাবি, নৌখাতে ক্ষতি হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এ শিল্পের সঙ্গে ২ লক্ষাধিক লোক জড়িত।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন