লকডাউনের কুফল: এখনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করুণ দশা
নিজস্ব প্রতিবেদক: আমানত, তারল্য, মুনাফা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সংকটের মধ্যে রয়েছে দেশের অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। দিন যত যাচ্ছে অব্যাংকিং আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সংকট তত বাড়ছে। প্রশাসনিক নির্দেশে লকডাউন এবং অন্যান্য বিধি-নিষেধে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা আরও করুণ হয়ে পড়েছে।
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, মুনাফায় প্রবৃদ্ধি করা কঠিন হয়ে পড়েছে প্রায় সবক’টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। এমনকি বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের সম্পদ ধরে রাখতে পারছে না। এর সঙ্গে তারল্য সংকট তো আছেই। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
গত ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ফলে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে।
সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথমার্ধ (জানুয়ারি-জুন) সংকটের মধ্য দিয়ে পার করেছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। অবশ্য এর মধ্যেও কিছু প্রতিষ্ঠান ভালো ব্যবসা করেছে। কিন্তু অব্যাংকিং আর্থিক খাতে সে সংখ্যা খুবই কম।
নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে প্রতি তিন মাস পরপর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়। এরই আলোকে তালিকাভুক্ত ২৩ অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টি চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকাশিত ওই আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মাত্র দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মুনাফা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কমে গেছে। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান লোকসানের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
ক্যাশ ফ্লো বা পরিচালন নগদ প্রবাহ ভুাত্মক হয়ে পড়ার অর্থ হলো নগদ অর্থের সংকট তৈরি হওয়া। শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো যত বেশি ভুাত্মক হবে নগদ অর্থের সংকটও তত বাড়বে। এ অবস্থা তৈরি হলে চাহিদা মেটাতে চড়া সুদে টাকা ধার করা লাগতে পারে। তাতে খরচ বেড়ে যায় এবং আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
এদিকে মুনাফা, সম্পদের মূল্য এবং ক্যাশ ফ্লো- এই তিন সূচকেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের। এগুলো হলো- ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং, আইসিবি, আইডিএলসি, মাইডাস ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং ও ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের মতে, লিজিং কোম্পানিগুলোর আমানতের পাশাপাশি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। আমানত না পাওয়ায় লিজিং কোম্পানিকে অতিরিক্ত সুদে আমানত সংগ্রহ করতে হচ্ছে। কিন্তু অতিরিক্ত এই সুদ বহন করার মতো ব্যবসা কোম্পানিগুলো করতে পারছে না। অনেকে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। আর্থিক খাতের এই সংকট দূর করতে হলে আগে ব্যাংকিং খাত ঠিক করতে হবে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. বখতিয়ার হাসান বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার পারফরম্যান্স নির্ভর করে আমানত ও ভু (লিজ) বিতরণের ওপর। ব্যবসা-বাণিজ্য কমে গেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভু বিতরণে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমেছে। এছাড়া বিতরণ করা ঋণের বড় অংশ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে, তা রিকভারি (আদায়) হচ্ছে না। সবমিলিয়ে আর্থিক খাত দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন