রাস্তায় বেড়েছে ক্ষুধার্ত মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক: দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের সন্ধানে ছুটছে মানুষ। পেটে ক্ষুধার জ্বালা। শহরে ভোটার না হওয়ায় এসব অসহায় দুর্ভাগাদের অনেকের কপালেই জুটছে না কোনো ত্রাণ। আতঙ্ক আর দীর্ঘশ্বাসে কাটছে তাদের দিন।
রাজধানীসহ সারাদেশেই প্রায় একই অবস্থা। খুলনার অবস্থাও টালমাতাল। খুলনায় মোটেও ভালো নেই কর্মহীন নিম্ন আয়ের অসহায় মানুষ। কাজ নেই, রোজগার নেই, তাই ঘরে খাবারও নেই। এ অবস্থায় ক্ষুধার যন্ত্রণায় ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসছেন তারা। মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে সকাল-সন্ধ্যা অপেক্ষা করছেন ত্রাণের আশায়। চৈত্রের তীব্র তাপদাহ মাথায় নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা খাদ্য সহায়তা পেতে অপেক্ষা করছেন।
বস্তিবাসী বৃদ্ধ, অসুস্থ মানুষ আর নারীদের সঙ্গে শিশুরাও নেমে এসেছে রাস্তায়। সারাদিন অপেক্ষা করেও অনেকের খাবার জুটছে না। আবার যারা খাবার বিতরণ করছেন, তাদের সমন্বয় না থাকায় কেউ খাবার পাচ্ছেন, কেউ পাচ্ছেন না। আবার অনেকে একাধিকবারও ত্রাণ সংগ্রহ করতে পারছেন।
ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা অধিকাংশই হতদরিদ্র রিকশা-ভ্যান চালক, দিনমজুর, হকার, অস্থায়ী পাটকল শ্রমিক, মাছ কোম্পানির কর্মচারী, রাজমিস্ত্রি, সবজি বিক্রেতা, দোকানদার। করোনার কারণে তাদের দৈনিক আয়ও বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকের ঘরেই চাল-ডাল শেষ।
ত্রাণের আশায় সড়কে নেমে আসা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভীষণ ক্ষুধার্ত তারা। ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার কেউ দিলে তা শিশুদের খাওয়ানো হচ্ছে । বড়দের সেই না খেয়েই থাকতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন নগরীর ভাসমান মানুষেরা। এরা ফুটপাতে কিংবা বিভিন্ন ঝুপড়িতে থাকেন। এদের অনেকেই শহরের ভোটার না। যে কারণে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা তাদের কোনো সহায়তা দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
অনেকেই জানিয়েছেন, তাদের কোনো কাজ নেই। তাই ঘরেও খাবার নেই। কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন থেকে কোনো সাহায্য পাননি তারা।
সোমবার সকালে আজাদ লন্ড্রির মোড় এলাকায় হতদরিদ্র সুফিয়া বলেন, আগে বাসায় কাম করতাম। এহন করতে পারি না। বুড়া মানুষ। আমাগে কেউ খোঁজ নেয় না। হুনছি বিভিন্ন পাড়ায় ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছে। আমরা এহনো কোনো ধরনের সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ পাইনি। আমরা কেমন আছি, কীভাবে আছি কোনো নেতা খোঁজও নেয়নি।
রূপসার নতুন বাজার বস্তির বাসিন্দা দিন মজুর আব্দুল্লাহ বলেন, আমি দিন মজুরি কাজ করি। এখন কাজকর্ম নাই। খাওয়া-দাওয়া নাই বললেই চলে। ঘরে বসে ছিলাম। কিন্তু এখন সাহায্যের জন্য বাইরে নামা লাগছে। ত্রাণ সামগ্রী কিছু না পেলে আমরা ক্ষুধায় মইরে যাব।
রেল স্টেশন এলাকায় ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা আকুতি মিনতি করে বলেন, আমাকে একটু সাহায্য করেন। আমি মেলা অসুস্থ। আমাকে একটু দান করেন। সব সময় নামাজ পড়ে দোয়া করবো। আমি কোথাও খাবার পাচ্ছি না।
তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অপর এক নারী জানান, তিনি স্টেশনে আগে চা বিক্রি করতেন। এখন পুলিশ চা বেচতে দেয় না। ঘরে চাল ডাল কিছুই নাই। আজকে রান্না হয়নি। একজনে কিছু খাবার দিয়েছেন তাই খেয়েছেন। তার ঘরে একটি প্রতিবন্ধী মেয়ে আছে। তার দুটো সন্তান রেখে স্বামী স্ট্রোক করে মরে গেছেন। বড় বিপদে আছেন। কেউ সহযোগিতা করেনি।
অনেকে অভিযোগ করেছেন, খাদ্য সহায়তার জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে গেলে তারা আইডি কার্ড চান। কিন্তু সহায়তা চাওয়া ব্যক্তিদের প্রশ্ন হলো- যাদের আইডি কার্ড নেই তারা কি সাহায্য পাবে না আর যাদের আইডি কার্ড আছে কিন্তু থাকে অন্য ওয়ার্ডে তারা কীভাবে সাহ্যয্য পাবে?
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন