রক্তাক্ত মুসলমানকে ‘হিন্দু বানিয়ে’ মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা!
নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার তেলেনিপাড়ায় গত সপ্তাহে যে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা হয়েছে, সেই সময়ের একটি ভিডিওতে রক্তাক্ত এক মুসলিম ব্যক্তিকে ‘হিন্দুদের রক্তস্নান’ বলে ভাইরাল করা হয়েছে। ওই মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় শত শত মুসলমানের বাড়িঘর-দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। হামলায় আহত হয়েছে বহু মুসলমান। মুসলমানরা ঘর-বাড়ি হারিয়ে এখন আশ্রয়শিবিরে আছেন।
সেরকমই একটি আশ্রয়শিবিরে আছেন চটকল শ্রমিক মঞ্জুর আলম। হাসপাতাল থেকে সদ্য ছাড়া পেয়েছেন তিনি। মাথায় ৫২টা সেলাই পড়েছে, হাতে কোপানো হয়েছিল, সেখানে ১১টা আর কান কেটে অর্ধেক ঝুলছিল, তা জোড়া লাগাতে সাতটি সেলাই করতে হয়েছে।
তিনি জানান, ১০ তারিখ রোজা ভাঙার পরে আমি আর দু’একজন ঘরের বাইরে বেরিয়েছিলাম। চারদিকে হল্লা হচ্ছিল। হঠাৎই আমাদের দুজনকে উগ্র হিন্দুরা আক্রমণ করে বাঁশ, লোহার রড, নেপালি চাকু দিয়ে। ওখান থেকে আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে আমার এক ভাই আর অন্য একজন। তখনই কেউ আমার একটা ভিডিও তুলেছিল। সেই ভিডিওটি বহু মানুষ দেখেছেন আর শেয়ারও করেছেন নানা সামাজিক প্ল্যাটফর্মে।
মূল ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে এক মধ্যবয়সী মানুষের মাথা থেকে অঝোরে রক্ত বেরুচ্ছে, তার গায়ের জামা ভিজে গেছে বৃষ্টির পানি আর রক্তে। সন্ধ্যাবেলার ঘটনা সেটি। আশপাশ থেকে কয়েকজন তার চিকিৎসা করছে। কিন্তু এই ব্যক্তি মুসলমান হলেও বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতা এই ভিডিওটা শেয়ার দিয়ে তাতে ক্যাপশন দিয়েছে, আর কত দিন হিন্দুদের রক্ত ঝরবে দিদি? আপনি আর আপনার রাজনীতি বাংলার হিন্দুদেরকে কোন জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে, সবাই বুঝতে পারছে।… হুগলী জেলার তেলেনিপাড়া এলাকার ঘটনা। যে রক্তাক্ত ব্যক্তির ভিডিও দেখিয়ে ‘হিন্দুদের রক্তস্নান’ বলে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেটা আসলে মঞ্জুর আলমের আহত হওয়ার পরে তোলা সেই ভিডিওটি।
শ্যামনগর নর্থ জুটমিলে কর্মরত মঞ্জুর আলম বলছিলেন, যে ভিডিও তুলেছিল, সে আমার নাম দেয়নি, কিন্তু হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে শুনছি ওই ভিডিওটা মনোজ নামের কারো বলে ফেসবুকে সারা দেশে ছেয়ে গেছে! আমি মুসলমান, আর ভিডিওর ওপরে লেখা হল একজন হিন্দু রক্তে ভেসে যাচ্ছে!’ বলছিলেন মঞ্জুর আলম।
তেলেনিপাড়ার মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা সংক্রান্ত এটিই প্রথম ভুয়া ভিডিও বা পোস্ট নয়। ভারতের ভুয়া খবর যাচাই করার ওয়েবসাইট অল্ট নিউজ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিলিন্দ পারান্ডের একটি ভিডিও টুইট খুঁজে পেয়েছে, যেখানে দুই ব্যক্তিকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারছে একদল মানুষ।
মিলিন্দ পারান্ডে ওই ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছে, পশ্চিমবঙ্গের সরকার মুসলিমদের ‘দুষ্টতা’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।” পরের বাক্যে সে লিখেছে, হুগলীর চন্দননগরে হাজার হাজার মুসলমানরা হিন্দুদের ঘর জ্বালাচ্ছে, হিন্দু নারীরা রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ প্রশাসন মুসলমানদের সহায়তা করছে। মিডিয়া এসব দেখাচ্ছে না। অল্ট নিউজ খুঁজে দেখেছে, ওই ভিডিওটির সাথে তেলেনিপাড়ার দাঙ্গার কোনো যোগ নেই। মূল ভিডিওটি এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের একটি অটো চুরির ঘটনার।
আগে পাকিস্তানের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা হয়েছিল, যেখানে দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এক ব্যক্তির মাথা ফেটে রক্ত বেরুচ্ছে। ওই ভিডিওটিকেও তেলেনিপাড়ার দাঙ্গার ছবি বলে ভাইরাল করা হয়েছিল।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন