যুক্তরাষ্ট্রে হিজাবের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পেইন
আল ইহসান ডেস্ক: মুসলিম নারীদের পছন্দের পোশাক হিজাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে বুধবার একদিনের একটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়।
অনুষ্ঠানটিতে হিজাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের ছাত্রীদেরকে হিজাব পরার সুযোগ করে দেয়া হয়।
আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত ‘হিজাব ইট আপ’ শিরোনামের এই ক্যাম্পেইনে অন্যান্য ধর্মের ছাত্র-ছাত্রীরাও তাদের হিজাব পরিধান করেন।
মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সালমা হায়দার বলেন, ‘আমি মনে করি এটি একদিনের জন্য অন্যের জুতা পরার মতোই চমৎকার।’
হায়দার ব্যাখ্যা করেন, ‘হিজাব সম্পর্কে প্রধান ভুল ধারণাগুলির একটি হল-হিজাবেক মুসলিম নারীদের ওপর অত্যাচারের একটি হাতিয়ার হিসেবে দেখা হয়। আমরা এই ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিতে চাচ্ছি। এটি একজন নারীর ব্যক্তিগত পছন্দ হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমি একজন মুসলমান। আমি হিজাব পরি না। কিন্তু আমার বোন হিজাব পরেন। আসলে এটা সম্পূর্ণই ব্যক্তির উপর নির্ভর করছে।’
ক্যাম্পেইনে অংশ নেয়া ছাত্রীদের মধ্যে একজন ছিলেন ডিইড্রা বেভারস। তিনি সবসময়ই মনে করতেন- হিজাব এমন কিছু যা নারীদেরকে পরতে বাধ্য করা হয় এবং তা ক্ষমতায়নের জন্য একটি হুমকি ছিল।
ডিইড্রা বেভারস বলেন, ‘যারা বলেন, ‘না, হিজাব আমার জন্য ইতিবাচক, এটা আমার জীবনের অংশ, এটা আমার সংস্কৃতির অংশ’, তাদর কাছ থেকে এমন দৃষ্টিভঙ্গি লাভ সত্যিই চমৎকার।’
নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা রিপোর্ট করেছে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে এবং কলেজগুলিতে জাতিগত উদ্দেশ্য প্রণোদিত ঘটনা ধারাবাহিকভাবে সংঘটিত হয়েছে। নির্বাচনের পর কয়েকজন মুসলিম ছাত্রীর ওপর একাধিক হামলার ঘটনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
‘কেন আমি হিজাব পরার সিদ্ধান্ত নিলাম’
মাসিলিয়া অ্যালি: আমার বোন প্রথম যখন হিজাব পরিধান করেছিল, তখন তার হাই স্কুলের সবচেয়ে ভাল বন্ধুটি তিন বছর তার সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
এর দুই সপ্তাহ পর, বাসে একজন মহিলা আমার এক মুসলিম বন্ধুর কাছে এসে চিৎকার করে দাবি করলো যে, তাকে তার হিজাব খুলে ফেলতে হবে নতুবা তিনি যেখান থেকে এসেছেন তাকে সেখানে ফিরে যেতে হবে।
এক মাস পরে, আমার আরেক বন্ধুকে হিজাবের কারণে তাকে একটি চাকরির সাক্ষাত্কার থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। যদিও চাকরিদাতার ইমেইলে বলা হয়েছিল যে তারা ‘তার যোগ্যতায় খুবই প্রভাবিত’ হয়েছিল।
তারও কয়েক মাস পর মসজিদে একজন ভদ্রমহিলা আমাকে জানায়, তিনি অফিস শেষ করে বাড়ির দিকে হাঁটতে ভয় পান কারণ প্রতিটি রাতে এক দল যুবক বাস স্টপ থেকে তার বাড়ি পর্যন্ত তাকে অনুসরণ করে এবং তারা তার হিজাব খুলে ফেলার হুমকি দেয়।
তাই যখন আমি হিজাব পরিধান করার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন তুমি এটা পরার সিদ্ধান্ত নিলে, মাসিলিয়া?’
এই জিজ্ঞাসার জবাবে আমার মাথায় খুবই স্বতন্ত্র একটি উত্তর ছিল আর তা হচ্ছে-‘আল্লাহ’।
হিজাব পরিধান- মূর্তি পূজা করা এবং পিতা-মাতাকে সম্মান করার মতো নয়, এটা হচ্ছে ইসলামের বিধান এবং এটি হয়ত আপনাকে অবাক করতে পারে যে, হিজাব কেবল মুসলিম নারীরাই পরিধান করেন না, খ্রিস্টান সহ অন্যান্য অনেক ধর্মের নারীরা এটি ব্যাপকভাবে পরছেন।
হিজাব ছাড়া নারীদের সম্পর্কে
এখন আমি জানি, আপনার মনের মধ্যে সম্ভবত অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। যেমন- তবে কেন লক্ষ লক্ষ মুসলমান নারী মাথায় হিজাব পরেন না? কিংবা নারীরা সম্পূর্ণভাবে আচ্ছাদিত হওয়া কতটা ন্যায্য যখন তার স্বামী সাধারণ পোশাক পরছে?
কেন একজন মুসলিম নারী হিজাব পরেন না বা কেন অন্য মুসলিম নারীদের থেকে ভিন্নভাবে কাজ করে, তা বুঝতে হলে তাকে আপনার স্বতন্ত্রভাবে জিজ্ঞাসা করতে হবে। কারণ এই প্রশ্নের জবাব এক একজন নারীর কাছে একেক রকম হবে।
কারো কাছে এর জবাব হতে পারে- তারা এখনো এটি পরার জন্য প্রস্তুত নয় কিংবা হিজাব ছাড়াই তারা ইতোমধ্যে আল্লাহর সাথে গভীর সংযোগ অনুভব করেন অথবা হতে পারে একজন মুসলিম হিসাবে নিজেকে প্রকাশ্যে জাহির করতে ভয় পান।
যদি আল্লাহ ধর্মের নির্দেশিকাগুলো বহন করেন, তবে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সঠিক ও ভুলের সমালোচনা করতে পারেন এবং যেহেতু প্রত্যেক ব্যক্তি আলাদা আলাদাভাবে ধর্মের সাথে তাদের ব্যক্তিগত ঐতিহ্যকে আলাদা করে, তাহলে একে অপরকে তুলনা করা বৃথা হবে।
কেন পুরুষদের আবরণ বা পর্দা করতে হবে না?
পুরুষদের এবং মহিলাদের জন্য বিভিন্ন পোশাকের বিধান সম্পর্কে আমি বিশ্বাস করি যে পিতৃতান্ত্রিকতা হচ্ছে সাংস্কৃতিক, আবশ্যিকভাবে ধর্মীয় নয়।
নারীদের মতো পুরুষদেরও ইসলামি পোশাক ও আচরণগত বিধান রয়েছে। পুরুষদেরও তাদের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ডেকে রাখার বিধান আছে। কিন্তু অমুসলিমদের জন্য অথবা যারা ধর্মের সঙ্গে পরিচিত নয়, তাদের মনে হতে পারে যে পুরুষের জন্য কোনো পোশাক কোড নেই কারণ তারা মনে করে মুসলিম নারীদের ছাড়া বাকী কারোই পোশাক কোড নেই।
কিছু মুসলিম পুরুষ হিজাব পরা নিয়ে চাপ দিতে নারীদের ওপর ধর্মীয় মতবাদ ব্যবহার করেন। প্রত্যেক সমাজে, এমনকি পশ্চিমা সমাজেও, পিতৃতান্ত্রিকতা নারীদের পছন্দকে প্রভাবিত করার ভূমিকা পালন করে থাকে।
মুসলিম নারীরা ভিন্ন নয় এবং সম্ভবত কিছু কিছু নারী পুরুষদের চাপের কারণে হিজাব পরেন। এটা বলা যাবে না যে অধিকাংশ লোকই এটা করে না, কারণ পুরুষরা এটা চায়। বলতে গেলে, জীবনের অন্যান্য দিকের পিতৃতন্ত্রও তার গতিপথেই চলছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন