মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্ররোচনামূলক মন্তব্য: রবিশঙ্করের বিরুদ্ধে এফআইআর
সাস নিউজ ডেস্ক : ভারতে ‘আধ্যাত্মিক গুরু’ নামে পরিচিত শ্রী শ্রী রবিশঙ্করের বিরুদ্ধে এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) দায়ের করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ বনাম রাম মন্দির ইস্যুতে মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী হায়দ্রাবাদে এফআইআর এবং উত্তর প্রদেশের লক্ষনৌতে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
হায়দ্রাবাদের মোঘলপুরা থানার কর্মকর্তা আর দেবেন্দর বলেন, ‘আধ্যাত্মিক গুরু’র বিরুদ্ধে শহরের দরগাহ জিহাদ ও শাহাদাত (ডিজেএস)-এর সচিব সালাউদ্দিন আফন অভিযোগ দায়ের করেছেন। রবিশঙ্কর মুসলিমদের ধর্মীয় বিশ্বাস, অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য ‘উসকানিমূলক’ মন্তব্য করেছেন বলে সালাউদ্দিন আফনের অভিযোগ।
শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘অযোধ্যা ইস্যু সমাধান না হলে ভারত সিরিয়ায় পরিণত হবে। রবিশঙ্করের দাবি, অযোধ্যা মুসলিমদের ধর্মীয়স্থল নয়। তাদের ওই ধর্মীয়স্থানের উপরে নিজেদের দাবি ছেড়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত।’
‘অযোধ্যা ইস্যু সমাধান না হলে ভারত সিরিয়ায় পরিণত হবে’ বলে রবিশঙ্কর যে মন্তব্য করেছেন তার বিরুদ্ধে লক্ষনৌতে মজলি- ই ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) দলের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।
মিমের জেলা সভাপতি তৌহিদ সিদ্দিকি নাজমি’র অভিযোগ গত ৫ মার্চ রবিশঙ্কর বলেছেন, যদি ভারতের মুসলিমরা অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে স্বেচ্ছায় মন্দির করতে না দেয় তাহলে ভারত সিরিয়ায় পরিণত হবে। তার অভিযোগ, রবিশঙ্কর ভারতকে সিরিয়ায় পরিণত হওয়া সংক্রান্ত মন্তব্যের মাধ্যমে ভারতীয় মুসলিমদের খোলাখুলি হুমকি দিয়েছেন।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করার পর তৌহিদ সিদ্দিকি এক হুঁশিয়ারিতে বলেন, যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এফআইআর না করে তাহলে আমাদের কর্মীরা লক্ষনৌতে সিনিয়র পুলিশ সুপারের দফতর ঘেরাও করবে।
অন্যদিকে, রবিশঙ্কর সাফাই দিয়ে বলেছেন, উদাহরণ হিসেবে কেবল সিরিয়ার উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি কোনো হুমকি দেননি। তার মন্তব্যের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে বলেও রবিশঙ্করের দাবি।
‘রবিশঙ্করের বক্তব্য ফৌজদারি অপরাধ’
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’র সম্পাদক ও কোলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমানুল হক আজ (শুক্রবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসারে সমস্ত বিষয় ঘটছে দেশকে ফ্যাসিবাদের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। পরপর আর্থিক দুর্নীতি হচ্ছে, ব্যাংকগুলো শূন্য হয়ে যাচ্ছে, জিনিসের দাম বেড়ে চলেছে, বেকারত্ব সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না। এসব দিকে যাতে মানুষের নজর না পড়ে সেজন্য নানা ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদের দিকে যাতে যাত্রা শুরু হয় বাবরী মসজিদ ছিল এরকম একটা ইস্যু। ২৫ বছর পার হয়ে গেলেও কিছু হয়নি। আজ রবিশঙ্কর যা বলছেন তা নিজের দুর্নীতি আড়াল করার জন্য, তাজমহলের পাশে যমুনা নদীর তীরে তিনি যে কাণ্ড করেছিলেন সেজন্য। তিনি যে বিপুল আর্থিক সম্পত্তির মালিক হয়েছেন সেসব রক্ষা করতে তাকে বিজেপিকে সন্তুষ্ট করে চলতে হবে। সরকার সচেতনভাবে এগুলোকে চলতে দিচ্ছে যাতে এসব নিয়ে যাতে মানুষ মাতামাতি করুক এবং অন্য মূল বিষয় নিয়ে যাতে মানুষ মাথা না ঘামায়।’
ড. ইমানুল হক আরও বলেন, ‘আদালতের স্বতঃপ্রণোদিতভাবে রবিশঙ্করের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করা উচিত। কারণ, সিরিয়া হয়ে যাওয়ার কথা বলে একজন সন্ত গৃহযুদ্ধের ডাক দিচ্ছেন! এটা ফৌজদারি অপরাধ। এটা দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক ধরণের যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। অবিলম্বে এজন্য রবিশঙ্করকে গ্রেফতার করা উচিত। এ ধরণের মন্তব্যের দায়ে রবিশঙ্করকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা উচিত।’
ড. ইমানুল হক বলেন, ‘আমাদের খুব অবাক লাগে যে একটা মামলা চলতে কত বছর লাগে? বাবরী মসজিদের জমি নিয়ে বিচার হচ্ছে, কিন্তু বাবরী মসজিদ যারা ভাঙল তাদের বিচার হবে না? সেই বিচারটা তো আগে সম্পন্ন হওয়া উচিত ছিল। এটা ভারতীয় গণতন্ত্র ও আমাদের পক্ষে এটা খুব বড় লজ্জা! যারা আমরা ভারতীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, ভারতীয় সংবিধানে বিশ্বাস করি ও মেনে চলি তাদের কাছে এটা খুব দুঃখ ও বেদনার বিষয় যে বহুবছরের পুরোনো ঐতিহ্যসম্পন্ন কাঠামো (বাবরী মসজিদ) যারা ভেঙে ফেললেন এবং তার জেরে ভারতে দশ হাজার মানুষ নিহত হল তার বিচার আজও সম্পন্ন হয়নি! এখন সেই জমির মালিকানা নিয়ে বিচার হচ্ছে। এটা একটা সাংঘাতিক বিষয়; তাহলে তো কেউ খুন হয়ে গেলে তার বিচার হবে না, সম্পত্তিটাই এক্ষেত্রে বড় হয়ে দাঁড়ালো, তার বিচার হবে!’#
পার্সটুডে
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন