মাস্ক ব্যবহার নিয়ে সরকারী পরিপত্রের বিপক্ষে আইনী নোটিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে মাস্ক ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে যে পরিপত্র জারি করা হয়েছে তার বিপক্ষে যুক্তি পেশ করে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবর আইনী নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বুধবার নোটিশটি আল মুতমাইন্নাহ মা ও শিশু হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার ডা. মুহম্মদ আব্দুল আলী মারুফের পক্ষ থেকে পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি এডভোকেট শেখ ওমর শরীফ।
নোটিশে বলা হয়েছে, ঢালাওভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধানের নির্দেশনা কোনোক্রমেই বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত কোনো পদক্ষেপ নয়। ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ আইওয়া’স কলেজ অফ মেডিসিন’-এর মেডিসিন ও এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ এলি পেরেনচেভিচ বলেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী যদি পাশের বাড়িতেও থাকে তাও আপনার মাস্ক ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন নেই। একজন সুস্থ মানুষের মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি নয়, উচিতও নয়।”
মাস্ক ব্যবহার বিপজ্জনক উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, ঢালাওভাবে মাস্ক ব্যবহার করা বিপজ্জনক হতে পারে বলে জানিয়েছে খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটি জানিয়েছে, মুখে মাস্ক পরে শরীরচর্চা, প্রাতঃভ্রমণ বা জগিং করলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না। এ অবস্থায় অক্সিজেন কমে গিয়ে উল্টো তা স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এছাড়া ভারী ধরনের কাজ, খুব বেশি দৈহিক পরিশ্রম হয় এমন কাজের সময়ও মাস্ক পরে থাকলে শরীরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে এবং মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের স্বাভাবিক ছন্দ বিঘ্নিত হতে পারে। যার ফলে দেখা দিতে পারে একাধিক আকস্মিক স্বাস্থ্য সমস্যা। এজন্য খুব বেশি দৈহিক পরিশ্রম হয় এমন কাজের সময় মাস্ক না পরা এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নেই এমন স্থানেই যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ডব্লিউএইচও। শরীরচর্চা, প্রাতঃভ্রমণ, জগিং, অত্যাধিক দৈহিক পরিশ্রমযুক্ত ভারী কাজের সময় মাস্ক পরে থাকলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতির ফলে অস্বাভাবিক ক্লান্তি, শরীরের বিভিন্ন অংশের পেশিতে টান পড়া বা খিঁচুনি, বমি ভাব, মাথা ঘোরানো এমনকি স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
মাস্ক পরিধান করে অনেকেই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে বলে উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে, বেশি সময় ধরে মাস্ক ব্যবহারের ফলে অনেকের নাক-মুখে ছোট লালচে ও গোলাপি ব্রন, জধংয উঁকি দিচ্ছে। খসখসে ত্বক, চুলকানি, ঠোঁটের চারপাশে লাল লাল গুটির মতো দাগ হচ্ছে। যারা বয়ঃসন্ধিতেও ব্রনের সমস্যায় ভোগেননি, তারাও মাস্ক ব্যবহারের ফলে সমস্যায় পড়েছেন। ডারমাটোলজিস্টরা এই মাস্কঘটিত ব্রনের নাম দিয়েছেন ‘মাস্কনে’, অর্থাৎ মাস্কের কারণে যে ব্রন বা অ্যাকনে।
ঢালাও মাস্ক পরিধান করা হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে নোটিশে বলা হয়, মাস্ক ব্যবহার সংক্রান্ত পরিপত্রটি সুস্পষ্টভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ)-এর নির্দেশনার বিপরীত। পরিপত্রের নির্দেশনাসমূহ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ সকল শিল্প কারখানায় কর্মরত শ্রমিক, হকার, রিকশা ও ভ্যান চালকদের জন্য মাস্ক পরিধান গুরুতর স্বাস্থ্যগত সংকট সৃষ্টি করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে অত্যাধিক দৈহিক পরিশ্রমযুক্ত ভারী কাজের সময় মাস্ক না পরতে, অথচ পরিপত্রে বাংলাদেশের পরিশ্রমী শ্রমিক, রিকশা ও ভ্যান চালকদেরকে মাস্ক পরিধানে বাধ্য করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত মাস্ক ব্যবহার সংক্রান্ত পরিপত্রটিতে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নির্দেশনা থাকায় বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে নোটিশদাতা সংক্ষুব্ধ হয়েছেন। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদাধিকারীদের থেকে এমনটা মোটেও প্রত্যাশিত নয়।
উল্লিখিত যুক্তির প্রেক্ষিতে নোটিশে দাবি করা হয়, নোটিশে পাওয়ার তিন কার্যদিবসের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত মাস্ক ব্যবহার সংক্রান্ত পরিপত্রটি যেন প্রত্যাহার করে নেয় হয়। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন