মানবতাবিরোধী অপরাধী :ময়মনসিংহে ৫ জনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ
নিজস্ব প্রতিবেদক : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
রোববার রাজধানীয় ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ৪০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মো. হান্নান খান।
আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন ময়মনসিংহের ধোবাউড়া পশ্চিম বালীগাঁও গ্রামের মো. কিতাব আলী ফকির (৮৫), মো. জনাব আলী (৬৮) এবং মো. আ. কুদ্দুছ (৬২)। এ ছাড়া মামলার অপর দুই পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।
আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও দেশান্তরিত হতে বাধ্য করার অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট শুরুর পর গত ৭ মার্চ এ মামলার তদন্ত কাজ শেষ হয়। তদন্তে মোট ৪০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত ১ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৩০ মে আসামিরা ময়মনসিংহের বর্তমান ধোবাউড়া থানাধীন বালিগাঁও গ্রামের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী হিসেবে চিহ্নিত হাতেম আলী ওরফে গেন্দা মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে তাকে আটক করার উদ্দেশে তার বাড়িতে হামলা করে। এ সময় পলাতক হাতেম আলীকে ধরে তার বাড়ির উঠানে এনে অমানুষিক নির্যাতন করে। এসময় তার দুই স্ত্রী তাকে রক্ষা করতে এলে তাদের তিনজনকে একসঙ্গে গাছে বেঁধে রেখে তাদের বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে এবং পরে তাদের তিনজনকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকিয়ে রেখে বাইরে থেকে দরজায় তালা দিয়ে চলে যায়। পরে পার্শ্ববর্তী ভারতের শিববাড়ীস্থ মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা সংবাদ পেয়ে হাতেম আলীকে উদ্ধারের পর সে তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়। এরপর আসামিরা এ সংবাদ জানতে পেরে হাতেম আলীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস করে দেয়।
এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে ২ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আসামিরা তাদের সঙ্গে সশস্ত্র রাজাকার ও পাকিস্তান দখরদার বাহিনী নিয়ে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানাধীন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং মুকিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সহযোগিতা প্রদানকারী হিসেবে চিহ্নিত তারাইকান্দি গ্রামের শহীদ নূর মোহাম্মদ হোসেন আকন্দের বাগীতে হামলা চালিয়ে নূর মোহাম্মদ ও তার দুই স্ত্রীকে হত্যা এবং নাত বউকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। এরপর একই গ্রামের মো. ইছহাক আলী, মো. জমসেদ আলী, মো. আব্দুর রাজ্জাক, মো. আব্দুল হেকিমসহ উক্ত গ্রামের পার্শ্ববর্তী এলাকার মো. সিরাজ আলী, মো. হাইদার আলী, মো. আব্দুল লতিফ, মো. মীর কাশেম, মো. রমজান আলীসহ অজ্ঞাত আরো ২৮ জনসহ মোট ৪১ জনকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন এবং ৪৫ জনকে গুলি করে হত্যা করে।
এরপর একই আক্রমণের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা পক্ষে ও মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সহযোগিতা প্রদানকারী হিসেবে চিহ্নিত তারাইকান্দি গ্রামের মাহমুদ হোসেন আকন্দ ও মিয়া হোসেন আকন্দের বাড়িতে হামলা করে ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে ও মোট ২২টি টিনের ঘরে আগুন দিয়ে ধ্বংস করে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন