মশা নিয়ে মুখোমুখি বেবিচক-ডিএনসিসি
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ যাত্রী, যাত্রীর স্বজন ও বিমানবন্দরের কর্মীরা। বিগত বছরে মশার কারণে ফ্লাইট বিলম্বের ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসলেও কোনও সমাধান হয়নি।
বিমানবন্দরের বাইরের এলাকা থেকে মশা আসছে এমন অভিযোগ তুলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে দুষছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে বিমানবন্দরে পরিচ্ছন্নতার অভাব, মশার প্রজনন ক্ষেত্র আছে এমন অভিযোগ করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে পাল্টা দোষ দিচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। দু পক্ষ মুখোমুখি হলেও কার্যকর সমাধান না হওয়ায় কমছে না মশার উৎপাত।
জানা গেছে, প্রতিবছরই মশার উৎপাতে ভোগান্তির মধ্যে পড়েন যাত্রী ও তাদের স্বজনরা। শুধু তাই নয় বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভোগেন মশার উৎপাতে। বিশেষ করে টার্মিনাল ভবনের বাইরে মশার উৎপাত বেশি। ফলে বাহিরে দায়িত্বরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মী, অপেক্ষমাণ যাত্রী ও তাদের স্বজনদের ভোগান্তি সব চেয়ে বেশি। খোলা স্থানে অতিরিক্ত মশা থাকায় কখনও কখনও উড়োজাহাজের ভেতরে ঢুকে পড়ে মশা। সেই মশা তাড়াতে বিপাকে পড়তে হয় এয়ারলাইন্স কর্মীদের । মশার উৎপাতের কারণে ফ্লাইট নির্দিষ্ট সময় থেকে দেরিতে ছাড়ার ঘটনাও ঘটেছে। বাধ্য হয়ে মশা তাড়াতে বিভিন্ন ওষুধ ছেটানোর পাশাপাশি ধূপ ব্যবহারও শুরু করা হচ্ছে বিমানবন্দরে। আগে বিমানবন্দরে সন্ধ্যার পর মশা মারার জন্য ওষুধ ছেটানো হতো। বর্তমানে দুপুর থেকেই মশা নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়া কখনও কখনও ফ্লাইট ছাড়ার আগেও উড়োজাহাজের আশপাশে দেওয়া ওষুধ ছেটানো হয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরে মশা তাড়াতে নানা উদ্যোগে নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে বিগত বছরগুলোতে।
বেবিচকের অভিযোগ, বিমানবন্দরের ভেতরের চেয়ে বাইরের থেকে আসা মশার উৎপাত বেশি। বিমানবন্দরের বাইরের আশপাশের আবর্জনা থেকেই মশার প্রজনন ও আগমন ঘটছে। বিমানবন্দরের আশপাশে ও বাইরে সিটি করপোরেশন মশা নিধনের উদ্যোগ নিলে সুফল মিলবে।
এদিকে ডিএনসিসির অভিযোগ, গত বছর বিমানবন্দরের মশা নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করা হয়। ডিএনসিসি’র পক্ষ থেকে প্রতিদিন লার্ভি সাইড, ম্যালেরিয়া অয়েল বি এবং ফগার মেশিনের সাহায্যে অ্যাডাল্টিসাইড ছেটানো হয়। বরং বিমানবন্দরে ভেতর ও বাহিরের একাধিক নিরাশয় থাকলেও সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। মশা নিধনে বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত জনবল ও যন্ত্রপাতি নেই। এ কারণে ডিএনসিসি মশা নিধনে পদক্ষেপ নিলেও কমছে না মশার উৎপাত।
এ বিষয়ে ডিএনসিসি প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, যার যার আঙিনা তাকেই পরিষ্কার করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ এসে নিজের বাড়ি তো পরিষ্কার করে দেবে না। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকেই নিজেদের জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, আমরা একটি ভেহিক্যাল মাউটেন্ড ফগিং মেশিন সরবরাহ করে আসছি। কিন্তু বিমানবন্দরের এলাকার পুকুর ও ডোবাসহ বিভিন্ন স্থানে মশার প্রজননকেন্দ্র রয়েছে, সেগুলো বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকেই পরিষ্কার রাখতে হবে। আমি ১৮ তারিখে বিমানবন্দরের ভেতরের এয়ার সাইডে পরিদর্শন করেছি। আমরা তো চাইলে বিমানবন্দরের ভেতরে কাজ করতে পারি না। বিমানবন্দরের নিজস্ব মশক নিধন কর্মী নেই, অদক্ষ লেবার দিয়ে কাজ করানো হয়। আমরা প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ দেবো, কিন্তু তাদের জনবল তো থাকতে হবে।
বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের আন্তরিকতা আছে, তাই মশা নিধনে গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বিমানবন্দরে মশার প্রজনন সক্ষম স্থান যদি ৩০ শতাংশ হয়, বিমানবন্দরের সীমানা সংলগ্ন এলাকায় ৩০০ ভাগ। সেসব এলাকায় বিমানবন্দরের কর্তৃপক্ষ নয়, সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে। মশা বিমানবন্দরের বাইরে থেকেই বেশি বিমানবন্দর এলাকায় প্রবেশ করে। ফলে সিটি কর্পোরেশন শতভাগ কার্যকর পদক্ষেপ নিলেই মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন