ভারতে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা: ‘পুলিশই পাথর জোগাড় করে বলেছিল মারো’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের রাজধানী দিল্লির মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীদেরই নেতৃত্ব দিয়েছিলো খোদ পুলিশ বাহিনী। বেশিরভাগ হামলাতেই পুলিশের নির্দেশের পরই ছুটে গিয়েছিলো উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। গত সপ্তাহে ভাইরাল হওয়া সেই ক্লিপে স্পষ্ট দেখা গেছে, সেদিন পাথর ছুড়েছিল দিল্লি পুলিশও। স্থানীয় এক হিন্দু যুবক জানিয়েছে, ওইদিন পুলিশ তাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে একটা ইট কুড়িয়ে নিয়ে মুসলিমদের বাড়িগুলোর দিকে মারার আহবান করেছিলো।
ঘটনাচক্রে, সেই সময়ে আরও একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়, পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছে উন্মত্ত জনতা। ওই ভিডিওকে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে মুসলিমদের তা-ব হিসেবে আখ্যায়িত করে টুইটারে এটি শেয়ার দেয় বিজেপি সদস্য সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা। কিন্তু ভিডিওটি যে দুই মাস আগেকার এবং গুজরাটের ঘটনা, তা প্রমাণ হয়ে যাওয়ায় পাথর-ছোড়া পুলিশের ভিডিও নিয়ে আরও বেশি হইচই শুরু হয়।
দিল্লিতে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা চলাকালে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের প্রশাসন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন দিল্লি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন উঠেছিল। এই পরিস্থিতিতে ৪ মার্চ বুধবার পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। ওই সাক্ষাতের পর কেজরিওয়াল যেভাবে দিল্লি পুলিশের ‘গুজব মোকাবিলার’ প্রশংসা করে, তা নিয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছে। এরইমধ্যে আবার মুসলিমদের উপর হামলা হওয়া এলাকা ঘুরে বিদেশি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট সামনে আসায় দাঙ্গাকালে দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়লো।
খজুরী খাস থানা এলাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা, পুলিশি সহায়তা কেন্দ্রের গা ঘেঁষে সে দিন পাথর ছুড়তে দেখা গিয়েছিল পুলিশকে। ঘটনার সপ্তাহখানেক পর ঠিক সেই এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন সাংবাদিকরা। মুসলিম ভুরা খানের কথায়ও উঠে আসে ‘পুলিশি তৎপরতার’ কথা। তার ভাষায়, ‘পুলিশের সঙ্গেই সেদিন আমাদের বাড়ি-দোকান জ্বালাতে এসেছিল ওরা। সব শেষ হয়ে গেলো, পুলিশ শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো!’ সেদিন কোনও রকমে ছাদে পালিয়ে এসে প্রাণে বাঁচেন ভুরা খান।
গত সপ্তাহের আরও একটি ভিডিও উঠে এসেছে। যেখানে দেখা গিয়েছিল, ফয়জান নামের এক মুসলিম যুবক ও তার চার সঙ্গীকে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে হিন্দুত্ববাদী সংগীত গাইতে বাধ্য করেছিল দিল্লি পুলিশ। দিন চারেক আগে হাসপাতালে মারা যায় ফয়জান। জানাজার পর ফয়জানের দাদা বলেন, পুলিশ এমনভাবে মেরেছিল যে, ও দাঁড়াতে-বসতেও পারছিল না। মারের চোটে গোটা শরীরটা নীল আর কালো হয়ে গিয়েছিল।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন