ভারতীয় সেনাবাহিনীতে গৃহবিবাদের আশঙ্কা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতীয় সেনাবাহিনীর জয়পুরস্থ সাউথ ওয়েস্টার্ন কমান্ড সদরদফতরের দুই লে. জেনারেলের মধ্যে নোংরা বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। এর জের ধরে উভয় কর্মকর্তা একে অপরের বিরুদ্ধে চিফ অব আর্মি স্টাফের কাছে অভিযোগ করেছেন।
সাউথ ওয়েস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফ লে. জেনারেল কে কে রেপসবল তার নিকটতম ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-ইন-চিফ অব দি কমান্ড লে. জেনারেল অলোক ক্লের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে বলে জানা গেছে। কয়েক সপ্তাহ আগে অভিযোগটি দেয়া হয়।
চিফ অব স্টাফ লে. জেনারেল রেপসবলের আচরণ নিয়েও সিওএএসের কাছে একটি অভিযোগ পাঠিয়েছেন আর্মি কমান্ডার, সাউথ ওয়েস্টার্ন কমান্ড, লে. জেনারেল ক্লের।
পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সেনা সদরদফতর এখন ভাইস চিফ অব আর্মি স্টাফ লে. জেনারেল এস কে সাইনিকে দায়িত্ব দিয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ার্স কোরের অফিসার লে. জেনারেল রেপসবল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কমান্ডের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি এর আগে যোধপুরভিত্তিক কোরের চিফ অব স্টাফ ছিলেন। তিনি আরো আগে হেডকোয়াটার্স নর্দার্ন কমান্ডের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ছিল।
এই জেনারেল ২০১৯ সালেল জুলাই মাসে আর্মড ফোর্সেস ট্রাইব্যুনালে (এএফটি) অভিযোগ করেছিলেন যে অফিসারদের পদোন্নতির স্পেশাল সিলেকশন বোর্ড লে. জেনারেল পদে পদোন্নতির জন্য তার ফলাফল ঘোষণা না করে স্থগিত রেখেছে। তিনি আবেদনে বলেন যে তার বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে যে তার পদোন্নতি অনুমোদিত হয়েছে, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তিনি এএফটিতে তার আবেদনে জয়ী হন। পরে তাকে লে. জেনারেল পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।
উভয় জেনারেলই সামরিক পরিবার থেকে এসেছে। লে. জেনারেল রেপসবলের ছোট ভাই লে. জেনারেল বি কে রেপসবল আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) আছেন। তার কর্মস্থল ব্যাঙ্গালোরের কমান্ডার এএসসি সেন্টার অ্যান্ড স্কুল। তাদের বাবা লে. কর্নেল জে এস রেপসবল ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাঞ্জাব রেজিমেন্টে কাজ করেছেন। তাকে পরে এএসসিতে বদলে করা হয়েছিল।
লে. জেনারেল অলোক ক্লের বাবা লে. জেনারেল গুরুদেব সিং ক্লের (অব.) ১৮ ক্যাভেোরির অফিসার ছিলেন। অলোকের বড় ভাই এয়ার মার্শাল জে এস ক্লের ছিলেন বিখ্যাত হেলিকপ্টার পাইলট। তিনি কমান্ডম্যান্ট অব ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমি হিসেবে অবসর নেন। লে. জেনারেল ক্লের ৬৮ আর্মার রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন। তিনি আম্বালার জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অতীতে ভারতীয় সেনাবাহিনী কোনো সিনিয়র অফিসার ও তার অধস্তনের মধ্যকার বিরোধকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হতো না। ২০১৬ সালে ওই সময়ের জিওসি দিল্লী এরিয়া, লে. জেনারেল আর রবিনদ্রনকে হঠাৎ করেই বদলি করা হয়। তিনি তার বসের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে খবর পাওয়া যায়।
২০০৮ সালে জিওইস-ইন-সি নর্দার্ন কমান্ড লে. জেনারেল এইচ এস পানাগকে সেন্ট্রাল আর্মি কমান্ডার হিসেবে বদলি করা হয়েছিল। তিনি ওই সময়ের সেনাপ্রধান জেনারেল দিপক কাপুরের বিরুদ্ধে নর্দার্ন আর্মি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় কেনাকাটায় অনিয়ম করার অভিযোগ করেছিলেন।
জয়পুরের জেনারেলদের মধ্যকার বিরোধ ও ভাইস চিফ অব আর্মি স্টাফকে সদরদফতরের তদন্তের নির্দেশ দেয়াটি অনেক সাবেক সেনা কর্মকর্তা ভালোভাবে দেখছেন না। তারা সামাজিক মাধ্যমে তদন্তের ব্যাপারে আপত্তি প্রকাশ করে দাবি করেন যে জুনিয়র জেনারেলকে বদলি করা উচিত।
মেজর জেনারেল বি এস ধানুয়া (অব.) টুইটে বলেন, যে বিরোধই হোক না কেন, আর্মি কমান্ডারই হলেন কমান্ডার-ইন-চিফ এবং চিফ অব স্টাফ হয় এখান থেকে পিছু হটবেন অথবা তাকে বদলি হয়ে যেতে হবে। এটি উদ্ভট যে আরেক সিনিয়র অফিসারকে সিওএএসের প্রতিনিধিত্ব করতে দেয়া হয়েছে। কমিটি দিয়ে সামরিক বাহিনী চালানো যায় না।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে সাবেক ওয়েস্টার্ন কমান্ডার লে. জেনারেল তেজ সাপ্রু বলেছে, সেনাবাহিনীর উচিত বিষয়টির যথাযথ তদন্ত করা। কী নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন