ভারতকে তেমন সুবিধা দেবে না অতল টানেল: চীনা বিশেষজ্ঞ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শনিবার হিমাচল প্রদেশের রোহতাংয়ে ১০,০০০ ফুট উচ্চতায় অতল টানেল বা সুরঙ্গপথের উদ্বোধন করেছে। এসময় সে বলেছে যে এই টানেল দেশের সীমান্ত অবকাঠামোকে ‘নতুন শক্তি’ যোগাবে।
মালভূমি অঞ্চল ও বিরল জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই টানেল নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য সামরিক। অটল টানেল উদ্বোধনের ফলে ভারতীয় সেনাদের দ্রুত সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন করা যাবে। এই টানেলের মধ্য দিয়ে সামরিক রসদও পাঠানো যাবে। এটা ঠিক যে এই টানেল উদ্বোধনের ফলে ভারতের অন্য অংশ থেকে লেহ-তে যাতায়াতের সময় কমে আসবে। এর ব্যবহারউপযোগিতার ক্ষেত্রে যুদ্ধ প্রস্তুতি ও কৌশলগত চ্যানেল দুই ভাবেই ভারতের জন্য স্পষ্টভাবে কৌশলগত তাৎপর্য রয়েছে।
শান্তির সময়ে এই টানেল ভারতীয় সেনাবাহিনীর যাতায়াত ও তাদের রসদ সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যাপক সাহায্য করবে। তবে সামরিক সংঘাত শুরু হয়ে গেলে যুদ্ধের সময় তেমন বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে না। এই টানেল অকার্যকর করে দেয়ার কৌশল জানা আছে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির। তারচেয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকা ভারত ও চীনের জন্য ভালো হবে। ভারতের উচিত হবে নিজেকে সংযত রাখা এবং সামরিক যুদ্ধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কোন উপায় বাদ না রেখে উষ্কানী দেয়া থেকেও তাকে বিরত থাকতে হবে। আসলে চীন ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ কার্যকারিতার ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট তফাৎ রয়ে গেছে, বিশেষ করে ভারতের নিয়মতান্ত্রিক যুদ্ধ সক্ষমতা কম। চীনের পর্যায়ে পৌছাতে ভারতের অনেক বাকি।
চীন সীমান্তে সড়ক, সেতু ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ জোরদার করেছে ভারত। দুই দশকের বেশি প্রচেষ্টা চালিয়ে গত বছর ২৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দারবুক-শাইওক-দৌলত বেগ ওলডি (ডিএসডিবিও) সড়ক নির্মাণ শেষ করেছে। লাদাখ অঞ্চলে পর্বতের মধ্য দিয়ে এই সড়ক গেছে। এছাড়াও ভারত সরকার চীন-ভারত সীমান্তে ৭৩টি কৌশলগত সড়ক চিহ্নিত করেছে। আসন্ন শীতের মধ্যেও এসব সড়ক নির্মাণ অব্যাহত থাকবে।
যুদ্ধপ্রস্তুতির এসব সড়ক নির্মাণকাজ এগুবে কিনা তা তিনটি ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করবে। প্রথমত, ভারত সরকারের দৃঢ় ইচ্ছা। মোদি সরকারের দৃঢ় ইচ্ছার কমতি নেই। দ্বিতীয়টি হলো বাজেট, যা অবশ্যই চীনের সঙ্গে মানানসই হতে হবে। তৃতীয় কার্যকারণ হলো প্রযুক্তি; চীনের তুলনায় ভারতের অবাঠামো নির্মাণের সামর্থ্য দুর্বল। উপরে উল্লেখিত ৭৩টি যুদ্ধপ্রস্তুতির সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব ১০ বছর আগেই আনা হয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা এখনো তৈরি হয়নি। এতেই ভারতের অবকাঠামো নির্মাণের সামর্থ্য বুঝা যায়। তাছাড়া উপত্যকা অঞ্চলে সড়ক নির্মাণ কঠিন এবং এ ব্যাপারে ভারতের অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে।
এখন শান্তির সময় তাই ভারত বুঝতে পারছে না যে যুদ্ধের সময় অতল টানেল কোন কাজে আসবে কিনা। এখন এর নির্মাণ নিয়ে গোটা দেশ উল্লসিত। ভারতের রাজনীতিকদের কথা বিবেচনা নিলে এই নির্মাণ ‘প্রদর্শন’ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলেই বেশি কাজে আসবে। এটা যে রাজনৈতিক প্রপাগাণ্ডা তা সহজেই অনুমেয়। যুদ্ধের সময় এই টানেলের বাস্তব ব্যবহার এখনো ভারতীয় রাজনীতিকদের বিবেচনা আসছে না। তবে এটা তাদের প্রতিষ্ঠিত বাস্তব স্বার্থ পূরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
সূত্র: গ্লোবাল টাইমস
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন