বেড়িবাঁধে ধ্বস, তলিয়ে গেলো কৃষকের ফসল
খুলনা সংবাদদাতা: লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যখন আউশ ধানের বীজতলা, ওলকচু, শাকসবজি, আম, পেঁপে, কলাসহ বিভিন্ন ফসলে স্বাবলম্বী হওয়ার কথা ভাবছিলেন ঠিক তখনই নিন্মমানের বেড়িবাধ বিধ্বস্থ হয়ে লোনা পানিতে তলিয়ে গেল কৃষকের ক্ষেত।
২ নম্বর কয়রা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক একজন কৃষক ধারদেনা করে ১ বিঘা জমিতে ওল, কচু, হলুদসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছিলেন। আগাম জাতের এসব সবজি ওঠানোর কথা ছিল কয়েকদিন পর। দাম ভালো থাকায় তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন সবজি বিক্রির টাকায় দেনা শোধের পর কিছু ধান কিনবেন, ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার খরচ যোগাবেন। কিন্তু কপোতাক্ষের লোনা পানিতে সম্পূর্ণভাবে ভেসে গেছে তার সবজি ক্ষেত। তার স্বপ্ন এখন আর পূরণ হবে না।
এভাবে স্বপ্নের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খুলনার কয়রা উপজেলার চার ইউনিয়নের হাজারো কৃষক। দুই নম্বর কয়রা গ্রামের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধে দাঁড়িয়ে লোনা পানিতে তলিয়ে থাকা সবজি ক্ষেত দেখাচ্ছিলেন আর আফসোস করছিলেন বিধান।
তিনি বলেন, ১ বিঘা ক্ষেতের মধ্যে প্রায় দশ কাঠা জায়গায় দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের ৫০০ পিস ওল, ৫০ কেজি কচু ও হলুদ, বাকি ১০ কাঠা জমিতে পেঁপে, কলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, পুঁইশাকসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছিলাম। বীজ ও পত্তনি খরচসহ খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। আগাম ওঠাতে পারলে লাখ টাকায় বিক্রি হত। এখন সব শেষ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ৬৩৩ হেক্টর জমিতে আউশ বীজতলা, শাকসবজী, পেঁপে, কলা, সূর্যমুখী, মুগ, তিল, আম ইত্যাদি ফসল আবাদ হয়েছিল। এরমধ্যে আম্ফানের আঘাতে ৫৫২ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। আর বাঁধ ভেঙে উপজেলার উত্তর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী, মহারাজপুর, কয়রা সদরসহ ৪ ইউনিয়নের প্রায় ৩৩শ হেক্টর আবাদি জমি লোনা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এতে প্রায় কয়েক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া চলতি আমন মৌসুমে এই ৩৩শ হেক্টর জমিতে আমন উৎপাদনেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মিজান মাহমুদ বলেন, এ মুহূর্তে লবণ পানি দ্রুত নিষ্কাশন ও প্রচুর বৃষ্টিতে লবণের মাত্রা কমে গেলে পুনরায় ফসল আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমনের বীজতলা তৈরির কথা, লবণ পানি নিষ্কাশন দেরিতে হলে বিকল্প হিসেবে কৃষকদের লবণ সহিষ্ণু জাতের বীজতলা তৈরির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন