বিপর্যস্ত অবস্থায় খেটে খাওয়া মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারের অঘোষিত লকডাউনে থমকে গেছে পুরান ঢাকার খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রাও। এ অবস্থায় গতকাল পঞ্চমদিনের কর্মহীন সময় কাটিয়েছে এসব মানুষ।
কোথায়ও লোকজনের ভিড় নেই, চলাচলও সীমিত। বাস, নৌযান, কল-কারখানাসহ বন্ধ দোকানপাটও। নেই হকার, কুলি ও বাসস্টাফদের হাঁক ডাক। চিরচেনা শহর যেন অচেনা!
গত বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষকে ১০ দিনের জন্য ঘরে অবস্থান করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তীব্র যানজটের নগরী এখন একদম ফাঁকা ও নীরব নিস্তব্ধ। এতে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় পড়েছেন দিনমজুরসহ নিম্ন-আয়ের খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষেরা।
রাজধানীর পুরান ঢাকার সদরঘাট, বাংলাবাজার, ইসলামপুর, লক্ষ্মীবাজার, কোটকাচারীর জনসন রোড, ধোলাইখাল রোড, সূত্রাপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মানুষের আনাগোনা একদম কম। ব্যবসানির্ভর এসব এলাকাসহ পাড়া মহল্লার দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে।
তবে সকালে দু-একটি দোকান কিছু সময়ের জন্য খোলা রাখা হয়। যাতে এলাকাবাসীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে। দোকানপাট বা বাজারের আশপাশে কিছু মানুষের হঠাৎ দেখা মিললেও তা অন্যান্য সময়ের তুলনায় একেবারেই নগন্য। রাস্তায় গাড়ি বলতে দেখা গেছে ছোট ছোট পিকআপ ভ্যান। তবে তাও সংখ্যায় হাতে-গোনা।
রিকশাচালক সোহাগ জানান, পরিস্থিতি যাই অউক হোক। পেট চালানির লাইগ্যা তো সড়কে নামতেই অইবো। ‘পয়লা চাইরদিন (চারদিন) বাসায় আছিলাম। সংসার তো ছলে না। খাইয়া বাঁচন লাগবো তো। এরপর আর থাকার সিস্টেম নাই। আমার সংসার চলে গাড়ি চালাইয়া। তাই পেটের দায়ে রাস্তায় নামছি রিকশা লইয়্যা।’
তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে পাশ থেকে আরেক রিকশাচালক হাবিব জানালেন, ঢাকা শহরের চিরচেনা রাস্তা যেন এখন অচেনা লাগে। এ অবস্থায় আয়-রোজগার একেবারেই কম।
তিনি বলেন, সকাল ৮ টায় রিকশা লইয়া বের অইছি। দুপুর ১২ টা বাজে। ৪ ঘণ্টায় মাত্র ৮০ টাকার খেপ (ভাড়া) মারছি। মানুষ বাইরে বাহির অয় না। জরুরি যেসব দোকানপাট বাজার খোলা রাখার কথা তারও বেশিরভাগ বন্ধ। হাবিব জানালেন, ২৫ / ৩০ টাকার তিনটি ট্রিপ দিয়ে ৮০ টাকা পেয়েছন। এই ছুটি ঘোষণার আগে একই সময়ে আয় হতো ৩০০-৩৫০ টাকা।
২১ বছরের তরুণ আমিন উদ্দিন। বাড়ি নোয়াখালী সদরে। ঢাকায় একটি গণপরিবহনের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। কিন্তুগাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। বললেন, পাঁচদিন ধরে কাজ নাই। হাতেও টাকা নাই। এখন না খেয়ে থাকার অবস্থা হয়েছে।
২০ বছর ধরে বুড়িগঙ্গা নদীর সদরঘাটে খেয়া পারাপার করেন আবদুর হালিম। তিনি জানান, একদিন কাজ করতে না পারলেই পরিবারের লোকজন কী খাবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যেতে হয়। বেশ কয়েক দিন ধরে কাজ করতে পারছেন না। তাই আয়ও নেই। এ অবস্থায় না খেয়ে থাকার উপক্রম হয়েছে তার। আগে দিনে সব খরচ বাদ দিয়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা হইতো। এখন সেখানে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা অইতাছে। তা দিয়ে বাসা ভাড়া, সংসার খরচ চালানো অনেক কষ্ট হয়ে যাবে। হুনছি (শুনেছি) সরকার দিনমজুরদের লাইগ্যা সাহায্য দিবো। কিন্তু দিবো কিভাবে? আমরা তো হারাদিন-ই নৌকা চালাই। সাহায্যের জন্য তিন চাইর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াইবো কে?
তিনি বলেন, লাইনে দাঁড়াইয়াও পাওয়া যায় না। অহন তো নৌকা চালাইয়া কিছু পাইতাছি। তহন না পাইলে তো দুই দিকই যাইবো। তাই সরকারের সাহায্য যাতে আমরা পাই সেইডা নিশ্চিত করন লাগবো।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন