বিদ্যুৎ-বিলে বকেয়ার চেয়ে সুদের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেশি
নিউজ ডেস্ক: বিদ্যুৎ-গ্রাহকদের বকেয়া বিলের চেয়ে সুদের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেশি হয়ে গেছে। বিলের চেয়ে সুদের হার বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে বেশিরভাগ গ্রাহকই বিল পরিশোধ করতে চান না বলে মনে করছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। একইসঙ্গে কমিশন এও মনে করছে, ৫ শতাংশ সরল সুদের সুযোগ দিলে খেলাপি গ্রাহকরা বিল পরিশোধে আগ্রহী হবেন।
বিইআরসির কাছে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর অভিযোগ করেছে, বেশিরভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠান বিল দিচ্ছে না। সারাদেশে পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে বিলখেলাপির অভিযোগ বেশি। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেও সমাধান করতে পারেনি। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে বিল দেওয়ার জন্য চলতি মাসপর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিইআরসির সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ‘অনেকক্ষেত্রে বিতরণ কোম্পানির বিদ্যুৎ বিল বাবদ যে অর্থ পাওনা থাকে, তার চেয়ে সুদের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে বিল পরিশোধ করতে পারছে না। বিল না দিতে দিতে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’
মিজানুর রহমান মনে করেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিতরণ কোম্পানিগুলো সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কাছে এই বিল পাবে। ওইসব প্রতিষ্ঠানও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। চাইলেই তাদের লাইন কেটে দেওয়া যায় না। এতে জনভোগান্তি বাড়তে পারে। ফলে, এই সমস্যার একটি সমাধান হওয়া দরকার।’
বিইআরসির বিদ্যুতের মূল্য নিয়ে গঠিত ‘কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি’ এই প্রস্তাব দিয়েছে। যা সুপারিশ আকারে পরবর্তী সময়ে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে দেওয়া হবে।
সরকারের কাছ থেকে বার্ষিক বরাদ্দের বাইরেও পৌর ও সিটি করপোরেশন নাগরিকদের কাছ থেকে নিয়মিত পৌরকর আদায় করে। এই পৌরকর দিয়ে অন্যান্য ব্যয়ের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার কথা। কিন্তু সিটি করপোরেশনগুলো তা করছে না। এর ফলে আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর অভিযোগ, তারা পিডিবির কাছ থেকে পাইকারি বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকপর্যায়ে বিক্রি করে। এক্ষেত্রে তারা চাইলেও পাইকারি বিদ্যুতের বকেয়া রাখতে পারেন না। অন্যদিকে দিনের পর দিন বকেয়া থাকাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে ১৫৮ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডিপিডিসি)। ডিসেম্বরের মধ্যে এই বিল পরিশোধ না করলে জানুয়ারিতে একসঙ্গে দুই সিটির সব বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ডিপিডিসি।
এ বিষয়ে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন্স) এটিএম হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমরা দুই সিটি করপোরেশনকে বকেয়া পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছি। ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে যদি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা না হয়, তাহলে জানুয়ারিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এছাড়া, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ করছে নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)। এছাড়া, সারাদেশের বেশিরভাগ পৌর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পিডিবি।
পিডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, ‘এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পিডিবির অধীন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কাছে পিডিবির পাওনা জমেছে ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। তারা এই বকেয়া আদায়ে অনেকবার চিঠি দিয়েছে।’ কিন্তু এখনও পাওনা পরিশোধ করা হয়নি বলেও তিনি জানান।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন