বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ
সাস নিউজ: গাজীপুরের টঙ্গী থেকে ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের পর বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
রাত ১০টার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে নোমানের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) নুরুল আজিম হিরু নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে রবিবার বিকেলে টঙ্গী থেকে বিএনপির এই নেতাসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে দলটি।
জানা যায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানকে গাজীপুর পুলিশ আটক করে। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানের সামনের কেবিনে নোমানকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
এ সময় আরও কয়েকজনকে আটক করে পিকআপের পেছনে ওঠানো হয়।
ওই সময় নোমানের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) নুরুল আজিম হিরু বলেন, রবিবার বিকেলে গাজীপুরে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে বের হয়ে আসার সময় আবদুল্লাহ আল নোমানকে আটকে করে নিয়ে যায় পুলিশ।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন আদালতের আদেশে স্থগিত হওয়ার পর বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ওই সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী নোমান।
হিরু বলেন, হাসান সরকারের টঙ্গীর বাসায় সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে টঙ্গী পৌর ভবনের সামনে এলে নোমানকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।
এর আগে নির্বাচনের মাত্র নয় দিন আগে এক আওয়ামী লীগ নেতার রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন তিন মাসের জন্য বন্ধের যে রায় দিয়েছেন সেখানে ‘সরকারের হাত’ দেখছেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচনে ‘লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভূমিকায় থাকা’ বিএনপির প্রার্থী।
রবিবার দুপুরে নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণার পর ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমি সরকারের এ হেন ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি। এখানে সরকারি দলের প্রার্থীর নিশ্চিত ভরাডুবি ছিল। এর মধ্যে কোনো সন্দেহের অবকাশ নাই। নির্বাচনে ভরাডুবি নিশ্চিত জেনেই সরকার ভীত হয়ে নির্বাচন স্থগিত করেছে। বিএনপির জয় নিশ্চিত জেনেই সরকার এ কাজ করেছে।’
টঙ্গীর আরিচপুরের নিজ বাসভবনে আয়োজিত জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রার্থী বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, সারা জীবন লড়াই করেছি। আমি আবেদন করব নির্বাচন কমিশনের কাছে, অতিসত্ত্বর ১৫ (মে) তারিখেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য।’
‘আমরা সব লড়াই চালিয়ে যাব, আইনি লড়াই এবং জনগণের অধিকার আদায়ের লড়াই- লড়াই শেষ হয় নাই’, যোগ করেন হাসান উদ্দিন সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় বিএনপি প্রার্থীর পাশে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমান, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনসহ জেলা বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্বাচন স্থগিতের রায় দেন। একই সঙ্গে সাভারের শিমুলিয়া এলাকার ছয়টি মৌজাকে নির্বাচনী এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। রুলে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গাজীপুর সিটির সীমানা নিয়ে ঢাকার সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান এ বি এম আজাহারুল ইসলাম সুরুজ এ রিট আবেদন করেন। সুরুজ সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনসংখ্যা বিষয়ক বিষয়ক। তিনি ২০১১ ও ২০১৬ সালের নির্বাচনে পরপর দুবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
আগামী ১৫ মে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। একই দিন খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও হওয়ার কথা রয়েছে। গাজীপুরে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী হলেন তরুণ নেতা জাহাঙ্গীর আলম।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। এবার প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলই এ সিটিতে তাদের প্রার্থীতার ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে।
রায় ঘোষণার পর ইসির পক্ষে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে এক প্রশ্নের জবাবে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এখন আমরা রিটের ব্যাপারে শুনেছি। হাইকোর্টের রায় সবাইকে মানতে হবে। সেটা মেনেই গাজীপুরে সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রিটের রায়ের কাগজপত্র দেখে আপিল করা হবে কি না সেটা বিবেচনা করবে ইসি কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, এই সংবাদ সম্মেলনের পরই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানকে গাজীপুর পুলিশ আটক করে। হাসান সরকারের টঙ্গীর বাসায় সংবাদ সম্মেলন শেষে সেখান থেকে বেরিয়ে টঙ্গী পৌর ভবনের সামনে এলে নোমানকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।
গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিত
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত করেছে হাইকোর্ট।
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রবিবার বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্থগিতাদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে আগামী ১৫ মে নির্বাচন হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে এই নির্বাচনের প্রচার জমেও উঠেছিল। এর মধ্যে রবিবার এই নির্বাচনে স্থগিতাদেশ দিলেন হাইকোর্ট।
জানা যায়, শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং নির্বাচনের তফসিল নিয়ে এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ বি এম আজহারুল ইসলাম রিটটি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী বি এম ইলিয়াস কচি। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে তৌহিদুল ইসলাম আর রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান ছিলেন।
পরে মোখলেছুর রহমান বলেন, আদালত গাজীপুর সিটি নির্বাচনের তফসিল স্থগিত করেছেন। সঙ্গে রুলও দিয়েছেন।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন