বাবরি মসজিদ ভাঙার সকল আসামীকে খালাস দিলো ভারতীয় আদালত -বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের তীব্র প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২৮ বছর আগে ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে। দীর্ঘ প্রায় তিন দশক পর বুধবার আলোচিত সেই মামলার রায় ঘোষণা হলো লখ্নৌয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতে।
রায়ে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সন্ত্রাসী আদভানিসহ ৩২ আসামিই বেকসুর খালাস পেয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত মোট ৩২ জনের মধ্যে ২৬ জন আদালতে উপস্থিত ছিলো। আসেনি সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদভানি ও উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং, বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুরলি মনোহর যোশী, বিনয় কাটিহারসহ দু’জন।
এদিকে ভারতীয় আদালতের এরকম একপাক্ষিক ও হিন্দুত্ববাদী ঘেঁষা রায়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন বিশ্বজুড়ে মুসলমানগণ।
ভারতীয় আদালতের এ রায়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটিজেনরাও। রায়ের পরপরই ক্ষোভ আর নিন্দায় উত্তাল হয়ে ওঠে নেট দুনিয়া। প্রতিবাদে ফেটে পড়েন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা। বিশ্বব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হওয়া এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় পরপর দুবার বিতর্কিত রায় দেয়ায় দেশটির আদালতের চরম অধঃপতন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সবাই।
ফেসবুকে পারভেজ আলম লিখেছেন, ‘জানি এটাই হবে। যেই দেশের মানুষ জয় শ্রী রাম বলার জন্য প্রকাশ্য মুসলিমদেরকে পিটিয়ে হত্যা করে সেই দেশের এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা যায় না, আমাদের দেশের নেতারা কি বলবে জানি না। তবে আমি বলবো মোদি সরকার আমার শত্রু প্রত্যেকটা মুসলিমের শত্রু পুরো বাংলাদেশের শত্রু।”
আরেকজন লিখেছেন, ‘একটা মসজিদ প্রকাশ্য দিবালোকে ভেঙে দেওয়া হল, অথচ কেউ দোষী নয়? এই বিচারব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান রাখা অসম্ভব।”
জিল্লুর রহমা লিখেছেন, ‘সম্পূর্ণ সাজানো নাটক। বিচার নয়, প্রহসন। গত নভেম্বরে বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানটিতে একটি হিন্দু মন্দির বানানোর পক্ষে রায় দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। তখনই ধারণা করা হয়েছিল কী হতে যাচ্ছে এ মামলার রায়। ধিক্কার ও নিন্দা জানাই এ ধরণের বিচারের নামের প্রহসনকে।
মনোয়ার হোসাইন লিখেছেন, ‘এতেই প্রমান হলো ভারতের আইন বিভাগ এবং আইনের শাসন ধ্বংস হলো, মোদির পছন্দে বিচারক বসিয়ে নিজের মনের মত রায় করাচ্ছে এটাই বাস্তব।’’
অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় ঘোষিত রায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যে বিজেপি সরকার হিন্দু ধর্মকে আশ্রয় করে রাজনীতি করছে এবং গোটা অঞ্চলে অশান্তি উসকে দিচ্ছে, সেই সরকারের কাছে বাবরি মসজিদ ভাঙার মামলার রায়ে আসামিরা খালাস পাবে সেটাই স্বাভাবিক। বরং আসামিরা কোনো না কোনোভাবে রাষ্ট্র, সরকারের কাছ থেকে পুরস্কৃত হবে, আর এতে আমি অবাক হবো না।
অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় ঘোষিত রায়ের এমন বিশ্লেষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের। বুধবার বহুল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণার পর এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এর আগে রামের জন্মভূমি নিয়ে আদালত যে রায় দিয়েছিলো, তাও বিতর্কিত এবং ওই রায় থেকেই বাবরি মসজিদ ভাঙার মামলার রায় সম্পর্কে ধারণা করা যাচ্ছিল। বিজেপি সরকার হিন্দুয়ানী জাতীয়তাবাদের যেভাবে বীজ বপণ করে চলছে, তাতে এই রায়ে আমি অবাক হইনি। এই রায় সত্যিকার অর্থে কোনো সমাধান দিতে পারলো না। বরং মৌলবাদীদের আরও উৎসাহ দেবে। মৌলবাদী শক্তি আরও শক্তিশালী হওয়ার এক ধরনের বার্তা পেলো।
এই আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক বলেন, বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনাকে নিছক ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ভুল হবে। ভারত রাষ্ট্রটি ক্রমাগতভাবে সহিংস রাজনীতিতে ভর করছে। আর এমন রাজনীতিতে ধর্মের রং আবশ্যক হয়ে পড়ে। বাবরি মসজিদ ভাঙা ছিল রাজনৈতিক হাতিয়ারকে শক্তিশালী করা। আর এর সুফল ভোগ করছে আজকের বিজেপি সরকার।
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ১৯৯২ সালের ওই ঘটনা কিন্তু গোটা দক্ষিণ এশিয়াকে প্রভাবিত করেছে। বাংলাদেশেও প্রতিবাদ হয়েছিল। আজকে যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে মুসলমানদের মনে অবশ্যই রেখাপাত করেছে। এরও তো প্রভাব আছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন