বন্ধের পথে আঞ্চলিক চামড়া ব্যবসা
বাগেরহাট সংবাদাদাতা: কয়েক বছর আগেও একটি কোরবানির গরুর চামড়া দুই হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, এমনকি ৩ হাজার টাকাও ছাড়িয়ে যেত। সেই চামড়া এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। ক্রমাগত চামড়ার দাম কমার কারণে ইতোমধ্যেই ব্যবসা ছেড়েছেন অনেকে।
হাতেগোনা যে কয়েকজন এখনো টিকে রয়েছেন তারাও রয়েছেন পুঁজি হারানোর শঙ্কায়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণোদনা ছাড়া সামনের দিনে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন বাগেরহাট জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা।
এদিকে গত বছরের তুলনায় গড়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা কম দামে চামড়া ক্রয়ের পরেও লোকসানের শঙ্কা করছেন চামড়া ব্যবসায়ী খান মিটস হাউসের মালিক আব্দুস সালাম খান।
তিনি বলেন, এবার ৪ হাজার গরুর চামড়া ক্রয় করেছি। গত বছর ঈদে প্রতিটি কাঁচা চামড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায় ক্রয় করলেও এবার গড়ে ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত দাম পড়েছে। প্রতিটি চামড়ার জন্য লবণ ও শ্রমিক ব্যয় রয়েছে ২০০ টাকার ওপরে। কিন্তু বাজারের অবস্থা খুব-ই খারাপ।
আব্দুস সালাম খান বলেন, খরচের টাকা উঠবে কি না তাই নিয়েই এখন সব চিন্তা। এই অবস্থায় সরকারিভাবে চামড়া ব্যবসায়ীদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা এবং প্রণোদনার আওতায় না আনলে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, গত বছর আমি ৬ হাজার চামড়া ক্রয় করেছিলাম। কিন্তু নাটোর ও পোস্তায় নিয়েও সব চামড়া বিক্রি করতে পারিনি। এক হাজার গরুর এবং দুই হাজার ছাগলের চামড়া বাগেরহাটে ফিরিয়ে এনে নদীতে ফেলে দিয়েছি। প্রতি বছর লোকসানের ফলে বাগেরহাটের অনেক ব্যবসায়ীই চামড়া ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন আমরা দু-একজন এই ব্যবসা করি।
আরেক চামড়া ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, এবার এমন অবস্থা হয়েছে যে, দূর-দুরান্ত থেকে যেসব মানুষ চামড়া নিয়ে এসেছে তাদের খরচের টাকাই উঠেনি। আসলে আমাদেরও কিছু করার নেই। আমরা যে দামে ক্রয় করেছি, সেই দামই উঠবে কি না, তাই নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি।
দড়াটানা নদীর এক মাঝি জানান, মোরেলগঞ্জ থেকে চামড়া বিক্রি করতে আসা এক ব্যাপারী চামড়া বিক্রি না করতে পেরে রাগ করে চামড়া নদীতে ফেলে দিয়ে গেছেন। আর যাওয়ার সময় বলেছেন এই ব্যবসা আর জীবনে করব না।
শহরের অর্ধশতাধিক মৌসুমি শ্রমিকের উপার্জনের বড় অংশ আসে এই চামড়া থেকে। চামড়া ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে কাজ হারাবেন তারাও।
নিয়ম মেনে চামড়া সংরক্ষণের জন্য ঈদের আগে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় করেছি বলে জানিয়েছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ আজিজুর রহমান।
তিনি বলেন, কোনো ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হোক এটা আমরা কোনো অবস্থাতেই চাই না। চামড়া বিক্রয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে কোনো বিষয়ে জেলা প্রশাসন ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন