প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণায় গতি ফিরেছে বেসরকারি ঋণে
নিজস্ব প্রতিবেদক:চলমান পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এটি বাস্তবায়নে নীতিগত নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত শতাধিক নির্দেশনা জারি করেছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। গঠন করেছে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল। কমানো হয়েছে ঋণের সুদহার। আর এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরে মন্থর অবস্থায় থাকা বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি বছরের আগস্ট শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের আগস্টে ঋণের স্থিতি ছিল ১০ লাখ ৭ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে বেসরকারি খাতের ঋণ বেড়েছে ৯৪ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে প্রথম মাস জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টেও ঋণ বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ। জুলাই মাসে ঋণের স্থিতি ছিল ১০ লাখ ৯৫ হাজার ২০১ কোটি টাকা। লকডাউনের কারণে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রণোদনার ঋণের কারণেই প্রবৃদ্ধি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা। সামনের মাসগুলোতে এই প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে বলে ধারণা তাদের।
অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় গত ৫ এপ্রিল বিভিন্ন খাতের জন্য ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঘোষিত এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য বেশ কয়েকটি পুনঃ অর্থায়ন তহবিল গঠন এবং বিদ্যমান তহবিলের আকার বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আওতায় ৫১ হাজার কোটি টাকার মতো তহবিলের জোগান পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এছাড়া সিআরআর দুই দফায় দেড় শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে।
ফলে আরও ১৯ হাজার কোটি টাকা নতুন করে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি গত ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্যান্য সবধরনের ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ বেধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব কারণে এখন বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ছে।
এদিকে তারল্য সংকট, ঋণের উচ্চ সুদহারসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় কারণে গত অর্থবছরের পুরো সময় বেসরকারি খাতের ঋণে বেশ ধীরগতি ছিল।
২০১৯-২০ অর্থবছরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, পুরো অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ খাতে ঋণ বেড়েছিল মাত্র ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। যা গত আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছরের প্রায় প্রতি মাসেই বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয় ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। এর পরের মাস আগস্টে তা ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ, অক্টোবরে ১০ দশমিক ০৪ শতাংশ।
নভেম্বরে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ডিসেম্বরে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ, জানুয়ারিতে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, মার্চে ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ ও এপ্রিলে ৮ দশমিক ৮২ শতাংশে নেমেছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন