পরিবহন সংকটে ব্যাহত পণ্য সরবরাহ
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার-প্রশাসন থেকে আরোপ করা বিধি-নিষেধের কারণে সারাদেশে খাদ্যপণ্য সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানী থেকে জরুরিভিত্তিতে খাদ্যপণ্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানো যাচ্ছে না। একইভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও খাদ্যপণ্য রাজধানীতে আনা যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে রাজধানীসহ সারাদেশে পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। চালক ও হেলপাররা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে চাইছেন না। আর মালিকরা ভয় পাচ্ছেন লোকসানের।
মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলমান পরিস্থিতিতে অনেক চালক ও হেলপার বাড়ি চলে গেছেন। যারা আছেন তারাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে রাস্তায় নামতে চাইছেন না। এছাড়া, দেশব্যাপী খাবার হোটেল বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘপথে ট্রাকের চালক ও হেলপারের খাবারের প্রয়োজন হয়। তারা রাস্তায় খাবার পাচ্ছেন না। অপরদিকে গাড়ি রাস্তায় অকেজো হয়ে পড়লে মেরামতেরও ব্যবস্থা নেই। কারণ, দেশের সব ওয়ার্কশপ বা গ্যারেজ বন্ধ রয়েছে। তাই এ অবস্থায় ট্রাক রাস্তায় নামানোর ভরসা পাচ্ছেন না তারা।
তারা আরও বলছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পণ্য পরিবহনের জন্য পর্যাপ্ত পণ্যও পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো ঢাকা থেকে পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক গেলো। কিন্তু সেখান থেকে ফেরার পথে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য পণ্য নেই। একইভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীতে পণ্য পৌঁছে দিয়ে ট্রাকগুলোকে খালি ফিরে যেতে হচ্ছে। এতে লোকসানের মুখে পড়ছেন মালিকরা। তাই তারা এমন সিঙ্গেল ট্রিপে রাজি হচ্ছেন না।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরাও একই কথা বলছেন। বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের অভাব নেই। কিন্তু সরকারি বিধিনিষেধের কারণে ট্রাকের অভাবে নওগাঁ ও কুষ্টিয়া থেকে চাল আসতে পারছে না। তাই এই মুহূর্তে রাজধানীতে চাল সরবরাহে কিছুটা সমস্যা হওয়ায় বাজারে চালের দাম বেড়েছে। পরিবহন সমস্যার সমাধান না হলে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা কঠিন হবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, রাজধানী থেকে কোনও ট্রাক আসছে না। তাই পর্যাপ্ত চাল মজুত থাকার পরেও রাজধানীতে পাঠাতে পারছি না। তার আশঙ্কা, অবিলম্বে এর সমাধান করা না গেলে চাল সরবরাহ ঠিক রাখা কঠিন হবে।
এ বিষয়ে রাজধানীর ট্রাক ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান বলেন, পরিবহনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না বলেই ট্রাক চলছে না। তিনি বলেন, ধরুন, রাজধানী থেকে একটি ট্রাক পণ্যবোঝাই করে চট্টগ্রাম বা বরিশাল পাঠালাম। গন্তব্যে পণ্য পৌঁছে দিয়ে ট্রাকটিকে ফেরার পথে খালি আসতে হয়। কারণ, ফেরার পথে রাজধানীতে নিয়ে আসার জন্য পণ্য পাওয়া যায় না। অথচ যাওয়া-আসার পথে ফেরির টোল, ব্রিজের টোলসহ নানা খরচ রয়েছে। এর ওপর পুলিশের হয়রানি তো রয়েছেই। লোকসান ও হয়রানি থেকে বাঁচতে ট্রাক গ্যারেজে রেখে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরিফুর রহমান বলেন, এছাড়া চালক ও হেলপাররা তো সরকারের ঘোষণা শুনেই বাড়ি চলে গেছেন। কবে আসবেন, কে জানে। এমন অবস্থায় ট্রাক কে চালাবে?
বাংলাদেশ ট্রাক শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহাম্মদ হোসেন বলেন, রাস্তায় নিরাপত্তা নেই। গ্যারেজ খোলা নেই। খাবার হোটেল বন্ধ। রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হলে সারাবো কোথায়? এর ওপর পুলিশের নানা রকমের হয়রানি রয়েছে। এসব কারণে আমরা গাড়ি চালাচ্ছি না।
তিনি বলেন, মালিকরা সিঙ্গেল ট্রিপে ট্রাক ছাড়েন না। এতে তারা লোকসানে পড়বেন। এসব কারণেই রাস্তায় পণ্যবাহী ট্রাকের সংকট দেখা দিয়েছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন