পবিত্র রমজানের শুরুতেই বিপাকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: লকডাউন পরিস্থিতির কারনে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে। দেশের সকল পর্যায়ে ব্যবসা স্থবির হয়ে যাওয়ায় অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এতে করে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। নিজ সংসার চালানো এবং কর্মচারীদের বেতন নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে এসব ব্যবসায়ীদের।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর পবিত্র রমজান মাস আসলেই আমাদের একটি টার্গেট থাকে। রমজানে ব্যবসা করে সারা বছর কর্মচারীদের নিয়ে ভালোভাবে যাতে দিন কাটাতে পারি। সেরকম একটি লক্ষ্য থাকে আমাদের। কিন্তু এবছর লকডাউনের কারণে সব ভেস্তে গেছে। বউ বাচ্চা নিয়ে বেঁচে থাকাটাই এখন কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে শেওড়াপাড়ার অনি জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন বলেন, প্রতি বছর পবিত্র রমজান মাস আসলে ক্রেতারা কমবেশি গয়না তৈরি করেন বা অনেকে পুরনো গয়নাকে নতুন করে মেরামত করেন। এতে করে রমজান মাসে আমাদের একটি টার্গেট থাকে সেটি পূরণ হয়। কর্মচারীদের নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করি পুরো রমজান মাস। অথচ এবার দোকান খুলতে পারছি না দোকানে দুইজন কর্মচারী, দোকান ভাড়া, বাসা ভাড়া ও সংসার খরচ কিভাবে দিব বুঝতে পারছি না। সবমিলিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে ঢাকা শহরে বাঁচাটাই দায় হয়ে যাবে বলেও তিনি জানান।
গোল্ড স্টার টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী নুর কামাল বলেন, প্রতিবছর ৮ রমজানের মধ্যেই পোশাকের অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিতাম। দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা কারখানায় পাঁচজন কর্মচারী পোশাক তৈরি করতো। অথচ এবছর দোকান খুলতে পারছি না।
তিনি বলেন আর্থিক সংকটের মধ্যে আমাদের দিন কাটছে। জমানো কিছু টাকা ছিল সেটিও শেষ হয়ে গেছে। দোকান ভাড়া কারখানা ভাড়া ও বাসা ভাড়া জমে যাচ্ছে। এগুলো কিভাবে পরিশোধ করব বুঝতে পারছি না। প্রতিবছর রমজান মাসে যে ইনকাম হয় সেটা দিয়ে সারাবছর চলে যায়। অথচ এবছর দোকান খুলতে পারিনি। জানিনা আগামী দিনগুলো কিভাবে চলবো।
তিনি আরো বলেন, শুধু আমিই নই আমার এখানে পাঁচ জন কর্মচারী প্রডাকশনে কাজ করে। তারাও চরম দুর্দিনে রয়েছেন। প্রোডাকশন বন্ধ থাকায় টাকা পাচ্ছেন না তারা। প্রতি সপ্তাহে এক এক জন কর্মচারী প্রোডাকশনে যে টাকা পেত সেটা দিয়েই তারা চাল-ডাল কিনে সংসার চালায়। এখন সবই বন্ধ তারা চরম কষ্টে দিন পাড় করছে। শুধু তাই নয় এসকল অসহায় মানুষ কোন খাবার সহযোগিতাও কারো কাছে থেকে পাচ্ছেন না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এক ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দায়িত্ববোধ থেকে সকাল থেকে রাত অবধি ফার্মেসি খোলা রাখছি। পাঁচ জন কর্মচারী নিয়েই বসে আছি লকডাউনের প্রতিদিনই। নির্ধারিত সময়েই দোকান খুলছে, কিন্তু বেচাকেনা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। কিভাবে কর্মচারীদের বেতন, দোকান ভাড়া ও সংসার খরচ চালাবো বুঝতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টিকে থাকাটাই মুশকিল হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে, এক মাস নগরীর প্রায় সব দোকান বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় চরম দুর্দিন কাটাচ্ছেন এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাদের একটি দাবি মানবিক দিক বিবেচনা করে দোকান ভাড়া মওকুফের জন্য বাড়ীর মালিকগণ সহনশীল হবেন বলে তারা মনে করেন।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন