নিজস্ব প্রতিবেদক : বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হলেও দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন কয়েক হাজার প্রার্থী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভুল তথ্য ও স্বেচ্ছাচারিতায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নানা ঝামেলা পেরিয়ে কোনো কোনো প্রার্থী যোগদান করলেও বর্তমানে তাদের এমপিওভুক্তি করা হচ্ছে না। এ কারণে ভুক্তভোগীরা ক্লাসে না গিয়ে সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তার দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে।
অনেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত নয়, কিন্তু এমপিওভুক্ত হিসেবে পদের চাহিদা দেয়ায় মনোনীত প্রার্থীদের অনেকে ওইসব প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেননি। বেশকিছু প্রার্থী যোগ দিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। কিন্তু তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
এছাড়া ভৌত বিজ্ঞানের বিষয়টি পুরোনো নীতিমালায় না থাকায় চাকরিতে যোগ দেয়া শিক্ষকদের এমপিও থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কোটা জটিলতার কারণে সুপারিশপ্রাপ্ত অনেক শিক্ষক এমপিও পাচ্ছেন না। এমনই বহুমুখী জটিলতায় পড়ে আছেন প্রার্থীরা। বিগত এক বছর ধরে চলছে এ পরিস্থিতি। কিন্তু চাকরিতে সুপারিশকারী প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মধ্যকার সমন্বয়হীনতার কারণে জটিলতার নিরসন হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
প্রতিদিন রাজধানীর এনটিআরসিএ কার্যালয়ে কয়েকশ ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থী অভিযোগ নিয়ে আসছেন। অনেকে লিখিত অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশিতে অভিযোগ নিয়ে যাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এস এম আশফাক হুসেন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানের জন্য মেধা তালিকা প্রকাশ করার পর নানা ধরনের অভিযোগ আসে। তার মধ্যে অনেকগুলো সমাধান করা হয়েছে। এখনও প্রায় দুই শতাধিক এমন অভিযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমাদের নির্দেশনা না মানায় আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিস্তারিত পরিস্থিতি উল্লেখ করে চিঠি পাঠাই। এসব বিষয়ে এনটিআরসিএ থেকে সব সমস্যা সমাধান করতে বলা হয়েছে। বর্তমানে এ সংক্রান্ত অভিযোগগুলো এনটিআরসিএ থেকে সমাধান করা হচ্ছে। যারা আদেশ অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাউশিকে চিঠি দেয়া হচ্ছে। দ্রুতই এ সংক্রান্ত সব অভিযোগের নিষ্পত্তি হবে বলেও জানান তিনি।
মাউশিতে খোঁজ নিতে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, এনটিআরসিএর সুপারিশ নিয়ে কর্মকর্তাদের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা আছে। সাধারণ শিক্ষায় পাস করা, কিন্তু এমন প্রার্থীকে মাদরাসায় আরবি বিষয়ের প্রভাষক করা হয়েছে। আবার মাদরাসায় নিবন্ধন করা, কিন্তু স্কুলের ধর্ম বিষয়ের শিক্ষক করা হয়েছে। শূন্য পদের প্রকৃত তথ্য না নিয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। আবার পদ এমপিওভুক্ত কি-না সে তথ্য না নিয়েও সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ভৌত বিজ্ঞান এমপিও নীতিমালায় নেই, কিন্তু নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এমপিও নীতিমালায় চার বছরের ডিগ্রিধারী গ্রাজুয়েট লাগবে আইসিটি বিষয়ের জন্য, কিন্তু ছয় মাসের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেয়া ব্যক্তিদেরও সুপারিশ করা হয়েছে। এভাবে নানা কারণে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিয়োগ করতে গিয়ে হ-য-ব-র-ল করে ফেলেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সুপারিশপ্রাপ্তরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, এনটিআরসিএর নিয়োগ সুপারিশের তালিকা প্রকাশের পর থেকে যোগদান করতে পারছেন না, করতে দেয়া হচ্ছে না, এমপিও হচ্ছে না- এমন নানা অভিযোগ নিয়ে আসছেন অনেকে।
তিনি বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে আমরা এনটিআরসিএকে লিখিতভাবে নির্দেশ দিয়েছি। তারা যদি তা না পারে তবে আমাদের কাছে লিখিতভাবে জানালে মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সারা দেশে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার ৩৯ হাজার ৫৩৫টি শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এনটিআরসিএ। ওইসব পদের বিপরীতে নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রায় এক লাখ ২০ হাজার চাকরিপ্রার্থী ২৫ লাখ ৭৯ হাজার ১৯৬টি আবেদন করেন অনলাইনে। তাদের মধ্য থেকে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক পদে ৩৯ হাজার ৫৩৫ জনকে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু এনটিআরসিএ থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদান করেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় চরম হতাশায় শিক্ষকরা।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন