নতুন বছরে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির আভাস
নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে তার প্রভাব পড়বে অন্য খাতেও। এই কারণে দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে। একইসঙ্গে গত কয়েক মাস ধরে চলে আসা ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলেও নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে। এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
তবে সরকারের নীতি নির্ধারকরা বলছেন, ২০১৯ সালে দেশের বাজার স্থিতিশীল ছিল, শুধু পেঁয়াজ ছাড়া। তারা বলছেন, দেশে নতুন বছরে মূল্যস্ফীতি বাড়ার কোনও কারণ আপাতত নেই। গেলো বছরে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির মূল কারণ ছিল পেঁয়াজ। যা নতুন বছরে হওয়ার আশঙ্কা নেই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া তথ্য মতে, গত এক বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বেড়েছে। এরমধ্যে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চাল, ভোজ্যতেল, আটা, গুঁড়োদুধ উল্লেখযোগ্য। এ সময় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়। অথচ ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
এদিকে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬.০৬ শতাংশ। যদিও চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশে বেঁধে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। অক্টোবরের ৫.৪৭ শতাংশ থেকে নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির প্রধান কারণ ছিল পেঁয়াজ। নভেম্বরে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬.৪১ শতাংশ। ২০১৮ সালের একই মাসে যা ছিল ৫.২৯ শতাংশ।
এদিকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এ বছর বাজেটের পর জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। তাতি, কামার, কুমার, জেলেসহ সব সম্প্রদায়ের-শ্রেডু পেশার মানুষের জন্য এ বাজেটে কোনও না কোনোভাবে প্রণোদনা বরাদ্দ আছে। তাদের স্বার্থ রক্ষায় বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধী মানুষের জন্যও অনেক বরাদ্দ আছে।
অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বর্তমান সরকারের কর রাজস্ব আহরণের মূলনীতি হচ্ছে, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করতে হবে, তবে সেটা করের হার বাড়িয়ে নয়। বরং সেটা করতে হবে করের আওতা বিস্তৃত করে। এটি করা হবে যেন নতুন বছর যাতে মূল্যস্ফীতি না হয়।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমদানি নির্ভর পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে তার প্রভাব অবশ্যই দেশীয় বাজারে পড়বে, তা রোধ করা কঠিন। কাজেই নতুন বছরের অনেকগুলো নিত্যপণ্যের বাজার নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক বাজার দরের ওঠানামার ওপর। ডলারের দাম বাড়ছে। এটি অব্যাহত থাকলে জিনিসপত্রের দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
নিত্যপণ্যের বাজার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে একমাত্র পেঁয়াজ ছাড়া সব ধরনের নিত্যপণ্য জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই ছিল। আশা করছি, নতুন বছর এমন কোনও সংকট হবে না। সরকারের চেষ্টা থাকবে নিত্যপণ্যের দাম যেন জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে যায়। এ বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন জানান, দেশে উৎপাদিত পণ্যের সরবরাহ ও মজুত ভালো। এগুলোর দাম বাড়বে না। আমদানি নির্ভর পণ্যগুলোর দাম স্থিতিশীল থাকলে নতুন বছর নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হবে না, তবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এক অশনি সংকেত।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন