নওগাঁয় নারীদের মাথার পরিত্যক্ত চুল সংগ্রহ ও বিক্রি করে ফয়জুর এখন স্বাবলম্বী
ফয়জুর রহমানের বাড়ি নওগাঁ জেলাধীন মহাদেবপুর উপজেলায় সফাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ লক্ষিপুর গ্রামে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে নারীদের মাথার চুল সংগ্রহ এবং তা বিক্রি করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। নওগাঁ শহরে ভাড়া বাসায় থেকে সন্তানদের পড়াশুনা করিয়ে মানুষের মত মানুষ করার স্বপ্নে বিভোর এখন তিনি।
আত্মপ্রত্যয়ী যুবক ফয়জুর রহমান আগে গ্রামে থেকে অন্যের জমিতে মজুরী দিয়ে সংসার চালাতো। দৈনিক আড়াইশ থেকে তিনশত টাকা আয় হতো। তবে যেদিন কাজ জুটতো সেদিন। কাজ না হলে বসেই দিন কাটতো। ভাগ্যে জুটতো অনাহার বা অর্ধাহার।
কিন্তু দিন পাল্টেছে এখন তার। সাইকেলে করে নওগাঁ শহরের বিভিন্ন মহল্লা, এগ্রাম সেগ্রাম ঘুরে ঘুরে নারীদের মাথার পরিত্যক্ত চুল সংগ্রহ করে থাকে। সেলুন বা বিউটিপার্লারে ছেটে ফেলা চুল নয়। প্রত্যহ চিরুনী দিয়ে চুল আঁচড়াতে চিরুনীর সাথে যে চুলগুলো উঠে আসে সেগুলো। এর বিনিময়ে কাউকে মুল্য বাবদ নগদ টাকা, কাউকে বিভিন্ন প্রসাধনী দ্রব্য সমূহ দিয়ে থাকে। আবার কোন কোন নারী চুলের কোন বিনিময় মূল্য নিতে রাজী হয়না। সেগুলো বিনা মুল্যে পেয়ে থাকে সে।
চিরুনী দিয়ে মাথা থেকে উঠে যাওয়া চুল বিক্রি হয় এ কথা ইতিমধ্যে জানাজানি হয়েছে। যার ফলে বাড়িতে বাড়িতে নারীরা সে চুল সংরক্ষণ করে রাখেন কখন আসবেন এসব চুল ক্রেতারা।
ফয়জুর জানায় এভাবে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে দই থেকে আড়াই কেজি চুল সংগ্রহ হয়ে থাকে। সেই হিসেবে মাসে তার চুল সংগ্রহ হয় কমপক্ষে ১০ কেজি। এ পরিমাণ চুল সংগ্রহ করতে মাসে তার মোট খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
এদের মত চুল সংগ্রহকারীদের নিকট থেকে পাইকারীভাবে চুল ক্রয় করার জন্য আড়ৎ রয়েছে মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া হাটে। সেই আড়তে তারা প্রতি কেজি চুল ৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করে থাকে। সেই হিসেবে সে মাসে তার সংগৃহিত চুল বিক্রি করে থাকে ৫০ হাজার টাকায়। এতে প্রতি মাসে নীট মুনাফা হয় কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা। ফলে তার সংসার থেকে অভাবের কালোছায়া দূর হয়ে গেছে।
ফয়জুর এখন তার মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে নওগাঁ শহরের উকিলপাড়ার মত অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া করে বসবাস করেন। দুই সন্তানকে শহরের ভালো স্কুলে ভর্ত্তি করিয়ে দিয়েছেন। সন্তানদের মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলে একটি সোনালী স্বপ্ন বাস্তবায়ন এখন আর বেশী দুরে নয়।
নওগাঁ শহরের মৃধা পাড়ার আনিছুর ও কিবরিয়া, আনন্দ নগর এলাকার হাফিজুর সহ বেশ কিছু যুবক এ পেশার সাথে যুক্ত হয়ে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন।
এ ব্যাপারে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুর মোহাম্মদ বলেছেন বর্তমানে মানুষের আয়বর্ধক অনেক কাজের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ এখন আর বসে অলস জীবন যাপন করেন না। কোন না কোন কাজের সাথে যুক্ত হয়ে জীবনধারনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে অনেক। এভাবেই মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বাংলাদেশ স্বল্প উন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন