দেশীয় পেঁয়াজের ব্যাপক সরবরাহ, স্বস্তি ফিরছে বাজারে
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশীয় পেঁয়াজের ব্যাপক সরবরাহ শুরুর পর থেকে ঝাঁজ কমা শুরু হয়েছে এই নিত্যপণ্যটির। পাইকারি-খুচরা বাজারে কেজি প্রতিদিনই ১-২ টাকা করে দাম কমেছে। কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পেরে সাধারণত ক্রেতারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন।
রাজধানীর শ্যামবাজারে দেখা গেছে, প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। গত সপ্তাহে যার দাম ছিল ৩৫-৪০ টাকা। এদিকে, কারওয়ানবাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। গত সপ্তাহে ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
জানতে চাইলে শ্যামবাজারের ‘পেঁয়াজ-রসুন আমদানিকারক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক ও মেসার্স রাজবাড়ি ভান্ডারের মালিক হাজী মাজেদ বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। তাই দামও অনেক কমেছে। এতে ক্রেতারাও স্বস্তিবোধ করছেন।
হাজী মাজেদ আরও বলেন, এখন কৃষকপর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা রাখা হচ্ছে। এতে কৃষক কিছুটা লাভবান হচ্ছেন। দেশি পেঁয়াজের চেয়ে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কম হলে কৃষক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এবার তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আগামী বছর পেঁয়াজ কমে যেতে পারে। এর ফলে আমদানির ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকায় ঠেকতে পারে। ’
কাওরান বাজারের ইসলাম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শাজাহান বলেন, বাজারে এখন আর পেঁয়াজ সরবরাহের কোনও সমস্যা নেই। বাজারে প্রতিদিনই সরবরাহ বাড়ছে। ফলে দামও কমছে। যতদিন এ অবস্থা বিরাজ করবে, ততদিন দাম কিছুটা ওঠানামা করবে।
কাওরান বাজারের বাইরে ফুটপাথে বসে পেঁয়াজ বিক্রি করেন মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, ‘এখন ভারতীয় পেঁয়াজের চেয়ে দেশি পেঁয়াজ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ক্রেতারা দেশি পেঁয়াজই কিনছেন।
পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি তারা মনিটরিং করছে। সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে অবস্থা বুঝে আমদানি করা পেঁয়াজের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা আছে। এ হার ৩০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ হতে পারে। তবে বিষয়টি বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘রোববার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বিষয়টি নিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। এনিয়ে নতুন করে কিছু বলার নাই। দেশের কৃষকরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে বিষয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা হচ্ছে- আগামী তিন বছরের মধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে রপ্তানি করতে হবে। এ জন্য যা যা করা দরকার, সব করতে হবে। পাশাপাশি কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হবে।’
দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে আসায় ট্রাকসেল কমে এসেছে জানিয়ে টিসিবি’র মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, ‘রাজধানীর ৫০টি স্পটে এবং বিভাগীয় শহরগুলোয় খোলাবাজারে ন্যায্যদামে পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এখনো সেগুলো চালু আছে। তবে বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় এখন ক্রেতারা আর আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। ট্রাকসেল বন্ধ করার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা বাজার মনিটরিং করছি।’ অবস্থার ওপর নির্ভর করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন