দুর্গম চরকে চাষের আওতায় আনলো সালাউদ্দিন
নিজস্ব প্রতিবেদক: চাঁদপুরের সালাউদ্দিন সরদার। মেঘনা নদীর দুর্গম এক চরকে চাষের আওতায় আনার ‘সাফল্য অর্জন’ করেছেন তিনি। সালাউদ্দিন হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই উদ্যোগ নিয়ে সফলতা অর্জন করেছেন।
এখন সারা বছরই সেখানে চাষ হচ্ছে সবজি ও মাছ। তাছাড়া গড়ে তোলা হয়েছে গবাদিপশুর খামার। সালাউদ্দিন বলেন, এক দুর্গম জনপদ নীলকমল চর। মেঘনা নদীর বুকে জেগে থাকা এই চরে যাওয়ার একমাত্র উপায় নৌযান। চরের অধিকাংশ জমি বর্ষায় তলিয়ে থাকে। তাই সেখানে আবহাওয়া অনুযায়ী চাষাবাদের পরিকল্পনা করি।
চারদিকে নানা জাতের সবজি ও ফলের আবাদ। চাষ হচ্ছে মাছ। পাশাপাশি গড়ে তোলা হয়েছে গবাদিপশুর খামার। সালাউদ্দিন আরও বলেন, এর শুরুটা হয় তিন বছর আগে। পৈতৃক জমিতে মাটি কেটে মাছ চাষ দিয়ে শুরু। এখানে মোট ১২০ একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৭০ একর জমিতে চাষ হয়। অল্প দিনেই ব্যাপক লাভ হওয়ায় বাড়ানো হয় বিনিয়োগের পরিমাণ। বর্তমানে এখানে আম, কাঁঠাল, তরমুজ, কলা, শসা, করলা, কদু, বেগুন, চালকুমড়ো, বরবটি, ঝিঙেসহ বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি চাষাবাদ করা হচ্ছে। একাধিক পুকুরে করা হচ্ছে মাছ চাষ। ১২০ একর জমিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। এ থেকে এখন প্রতিদিন আয় হচ্ছে এক লাখ টাকা। পর্যায়ক্রমে পুরো ১২০ একর জমি ব্যবহার করা হবে।
তিনি বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে দুই একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। খুব শিগগিরই হাজার দেড়েক তরমুজ আমরা বাজারজাত করব। পর্যায়ক্রমে এখান থেকে আরও পাঁচ হাজার তরমুজ বাজারজাত করা হবে। আগামীতে তরমুজ চাষের পরিধিও আরও বাড়ানো হবে। এখানে প্রায় অর্ধশত শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে তিনি জানান।
খামার দেখতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, এখানে এসে তারা উৎসাহিত হয়েছেন। নদীর পাশে পরিত্যক্ত দুর্গম চরে কীভাবে ফল-সবজি চাষাবাদ হচ্ছে তা দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছি। বেকার লোকজন এ ধরনের খামার গড়ে তুলতে পারে। সালাউদ্দিনের এই খামার দুর্গম চরে চাষাবাদের দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন, মেঘনার দুর্গম চরাঞ্চলে বৃহৎ পরিসরে ফলের বাগান, মাছ চাষ, গবাদিপশু, সবজি চাষসহ বিভিন্ন ধরনের আবাদ দেখে অন্যরা উৎসাহিত হচ্ছে এবং আশপাশে অনেক খামার গড়ে উঠছে। এতে এলাকাটি কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, এক সময় এখানে চাষাবাদ করা সম্ভব ছিল না। এখন পুরো জায়গা চাষ-উপযোগী করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে খামারে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এখানকার উৎপাদিত পণ্য চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর পাশাপাশি আশপাশের জেলাগুলোয়ও বিক্রি করা হচ্ছে। এই কৃষি খামারে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বেকার যুবকরা খামার দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন