‘দুঃখের পানি’কে ‘আশার পানি’তে পরিণত করুন : ইনু
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, এখন বঙ্গোপসারের তীরে ‘দুঃখের পানি’কে ‘আশার পানি’তে পরিণত করার সময়।
তিনি বলেন, ‘পানি সম্পদের সৌহার্দ্যপূর্ণ অংশীদারিত্ব ও সামষ্টিক ব্যবহার আঞ্চলিক সহযোগিতার সোনালি চাবি।’
মন্ত্রী মঙ্গলবার ভারতের সিকিমের দর্শনীয় নগরী গ্যাংটকে ‘ইন্টিগ্রেটিং বিমসটেক ২০১৮’ সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতাকালে একথা বলেন।
সিকিমের পর্যটন মন্ত্রী ভীম প্রসাদ ধাঙ্গেল ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন।
ইনু বলেন, ‘আমরা আমাদের দুর্ভোগের কথা জানি, কিন্তু আমরা এখনও আমাদের সম্পদের কথা জানতে পারিনি। বঙ্গোপসাগরের অববাহিকা জুড়ে হাজার হাজার নদ-নদী প্রবাহিত হয়েছে। এসব নদ-নদী সম্পদ হলেও প্রায়শই দুঃখের কারণ ঘটায়। আর এখন সেই ‘দুঃখের পানি’কে ‘আশার পানি’তে পরিণত করার সময় এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘জোরালো আঞ্চলিক সহযোগিতা হলো বিশ্বায়নের যুগে টিকে থাকার হাতিয়ার। আর আমরা জীবনসঙ্গী পাল্টাতে পারলেও প্রতিবেশী পাল্টাতে পারি না। তাই তাদের সাথে শান্তিতে বসবাস করতে শেখাই উত্তম।’
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘প্রতিবেশী প্রথম’ ও ‘পূর্বে কাজ কর’-এর ওপর দৃষ্টি দিয়ে বিমসটেককে নিছক নীতি-চালিত আঞ্চলিক সহযোগিতার সংগঠনে বদলে একে বাজার চালিত ও গণমুখী সংগঠনে পরিণত করা, সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সমাধান করা এবং সহযোগিতার খাতিরে জটিল ও স্পর্শকাতর বিষয়াদি দূরে সরিয়ে রাখাসহ ৫ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
প্রস্তাবসমূহের মধ্যে আরো রয়েছে, বহুমুখী পরিবহন করিডোরের মাধ্যমে সহজ ট্রাফিক ব্যবস্থা ও উদার ভিসা পদ্ধতি গড়ে তোলে বিমসটেকের ওপর জনগণের আস্থা সৃষ্টি, সহযোগিতার মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত সফটওয়্যার ও টেরেস্ট্রিয়াল অপটিক্যাল ফাইভার নেটওয়ার্ক অবকাঠামো নির্মাণ, বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী দেশগুলোর কর্তৃক সামষ্টিকভাবে পানি সম্পদকে কাজে লাগাতে গঙ্গা-ব্রাহ্মপুত্র-মেঘনা (জিবিএম) মেগা প্রকল্প গ্রহণ, যা সহযোগিতার দ্বার উন্মোচনের সোনালি চাবি।
‘আমরা বর্তমানে এশীয় শতাব্দীতে বাস করছি’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্র বিন্দু এখন এশিয়ার দিকে সরে আসছে এবং আমাদের অঞ্চলে একটি দ্রুত অর্থনৈতিক রূপান্তর সংগঠিত হচ্ছে। আর দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অনন্য সহযোগিতার সংগঠন বিমসটেক এর সুফল উঠাতে প্রস্তুত রয়েছে।’
উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন এসিটি (ইস্ট কাউন্সিল অব আইসিসি) চেয়ারম্যান রজত নাগ। বক্তব্য রাখেন বিমসটেক সচিবালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল এম শহীদুল ইসলাম, এফবিসিসিআই সভাপতি মতলুব আহমাদ, শ্রীলংকার প্রফেসর এমিরেটাস ড. গামিনী কেরাওয়েলা এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পিয়াস শ্রীভাস্তভা।
অনুষ্ঠানে বিমসটেক সচিবালয়ের পরিচালক এস এম নাজমুল হাসান এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের মুহাম্মদ আবদুল্লাহিল কাইয়ুমও উপস্থিত ছিলেন।
১৯৯৭ সালে বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল এন্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) গঠিত হয়। বর্তমানে ৭টি দেশ এর সদস্য। দেশগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ড।
এই উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার দেশগুলোতে ১৫০ কোটি মানুষ বাস করে, যা বিশ্ব জনসংখ্যার ২২ শতাংশ। ২০১৪ সালে ঢাকায় বিমসটেকের স্থায়ী সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বৃহস্পতিবার দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন