দীর্ঘদিন সচল নেই পরিবহন, যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে ক্ষতি ৩০ হাজার কোটি
নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ২৬ মার্চ থেকে দেশের সব গণপরিবহন সরকারী নির্দেশে বন্ধ করে দেয়া হয়। দুই মাসের বেশি সময় ধরে এসব পরিবহন পরিচালিত হয়নি। পরিবহনগুলো সড়কের পাশে, গ্যারেজ কিংবা টার্মিনালে পার্কিং করে রাখা ছিল। এই দীর্ঘসময় সচল না থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং রোদ-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরিবহনগুলো।
এতে টায়ার, ব্যাটারিসহ ভেতরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ অকেজো ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবহন মালিকরা জানিয়েছেন, বিকল হয়ে পড়া এসব যন্ত্রাংশ মেরামতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তাদের দাবি, গত দুই মাসে এই ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
মালিকরা জানিয়েছে, লকডাউনের কারণে আয় বন্ধ থাকলেও পরিবহনের বিপরীতে নেওয়া ব্যাংক লোন এবং চালক-হেল্পারদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর ওপর পরিবহনের এমন ক্ষতি তাদের আরও অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এমন ক্ষতি পোষাতে অনেক বেগ পেতে হবে পরিবহন খাতকে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা শুরুর দিকে বলেছি লকডাউনের কারণে পরিবহন বন্ধ থাকায় দৈনিক প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে পরিবহন খাত। কিন্তু এখন যেটা দেখছি, এর পরিমাণ আরও বেশি। দুই মাসে এই ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন পরিবহন না চলার কারণে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, পরিবহনের ব্যাটারি ও টায়ার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে। টায়ার শক্ত হয়ে পড়েছে। যা ব্যবহার করা যাবে না। এ দুটি জিনিস নতুন করে প্রতিস্থাপন করে যানবাহন চালাতে হবে। এ ছাড়া ইঞ্জিনের তেল ও মবিলসহ ভেতরের অনেক যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যাবে। এগুলো মেরামত করতে অনেক বেগ পেতে হবে। একসঙ্গে এতো মিস্ত্রি বা ইঞ্জিনিয়ার পাওয়া অনেক কঠিন হবে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আজ থেকে স্বল্পপরিসরে গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারের এমন ঘোষণার পর এরই মধ্যে পরিবহন মালিকরা যানবাহনগুলোকে চালু করার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে অধিকাংশ যানবাহনের বিভিন্ন যন্ত্রণাংশ বিকল দেখতে পান।
নগরীর সায়েদাবাদ ও কমলাপুর রেল স্টেশনের সামনের সড়কের পাশ জুড়ে শত শত যানবাহন দাঁড়িয়ে আছে। এসব যানবাহন পরিচালনা করার জন্য প্রস্তুত করছেন শ্রমিকরা। কেউ কেউ পানি দিয়ে বাসের বিভিন্ন অংশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন। আবার কেউ কেউ ইঞ্জিন চালু করার জন্য চেষ্টা করছেন। ৬ নম্বর পরিবহনের চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, সকাল থেকে কয়েকবার চেষ্টা করেছি। গাড়ি স্টার্ট নেয় না। ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে। এটা নতুন করে লাগাতে হবে। না হলে গাড়ি ঠিক হবে না।
মিডওয়ে পরিবহনের চালকের সহযোগী আরাফাত হোসেন বলেন, আমাদের অনেকগুলো গাড়ির চাকা বসে গেছে। এসব চাকা দিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না। অনেক গাড়ি স্টার্ট নেয় না। অনেকগুলোর আসন, ব্রেক শো নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো মেরামতের জন্য আমরা কাজ করছি। অনেকগুলো বিষয় আছে যা আমাদের দ্বারা মেরামত করা সম্ভব নয়। ভালো ইঞ্জিনিয়ার লাগবে। এমন অবস্থা সবার। গাড়ির জন্য এখন মিস্ত্রি বা টেকনিশিয়ান প্রয়োজন।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সোহাগ পরিবহনের পরিচালক মারুফ তালুকদার সোহেল বলেন, একেকটি ব্যাটারির দাম ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। পরিবহনের ধরন বুঝে একেকটি টায়ারের দামও অনেক। একটি পরিবহন যখন বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন বসে থাকে তখন এই দুটি জিনিস বিকল হওয়াটা নিশ্চিত। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি জিনিস যুক্ত হয়। বিশেষ করে, গাড়িতে রাবারের জিনিসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া ব্রেক-শো, গ্যাসের লাইন, বসার সিটগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর বাইরে রোদ বা বৃষ্টিতে থাকার কারণে গাড়ির বডিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা যেটা এখন দেখছি। আগে এভাবে আমরা কখনও এমন ক্ষতির মুখোমুখি হইনি।
তিনি আরও বলেন, একটি গাড়ি যখন রানিংয়ের ওপর থাকে তখন গাড়িটির যতœ নেওয়া হয়। যন্ত্রাংশগুলো সচল থাকে। আর যখন গাড়ি বন্ধ রাখা হয় তখন যন্ত্রণাংশগুলো ধীরে ধীরে ড্যামেজ হতে থাকে। এই ক্ষতি আসলে সব গাড়ির একরকম হবে না, একেক গাড়িতে একেক রকম হবে। এই মুহূর্তে যদিও এই ক্ষতির পরিমাণ কতো তা নির্ধারণ করা কঠিন, তবে এটা বলা যায়, আমরা মালিকরা বিশাল একটা ক্ষতির মুখে পড়ে গেছি। এই ক্ষতির পরিমাণটাও কিন্তু ছোট হবে না।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন