টাকার মান কমাবে না সরকার -অর্থমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক : টাকার মান ডলারের বিপরীতে কমানো হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, আমরা প্রয়োজনে ভিন্ন খাতকে প্রণোদনা দেব। তারপরও আমরা টাকার মান কমাবো না। কারণ বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর। তাই টাকার মান কমালে আমাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বুধবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সবাই চেয়েছিল যে আমাদের কারেন্সি ডিভ্যালিউশন (টাকার মান ডলারের বিপরীতে কমানো) করা হোক। তাদের যুক্তি ছিল কারেন্সি ডিভ্যালিউশন হলে রফতানি বাণিজ্য থেকে শুরু করে রেমিট্যান্স অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু আমরা বলেছি অন্য যেসব দেশ কারেন্সি ডিভ্যালিউশন করেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে চায় না।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের স্পেসিফিক খাতে প্রণোদনা দেব। তাহলে ওই খাতটি বেগবান হবে। তেমনিভাবে রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে আমরা তৈরি পোশাক খাতকে প্রণোদনা দিয়েছি। আরও দিতে হলে দেব।
মন্ত্রী বলেন, এটা বার বার বলা হয়, কারেন্সি ডিভ্যালিউশন কেন করা হচ্ছে না? আমরা মনে করি কারেন্সি ডিভ্যালিউশন করলে আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য খারাপ হবে। কারণ আমরা এত পরিমাণ অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করেছি, এখন অবকাঠামোতে বিনিয়োগে আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আশা করছি। কারেন্সি ডিভ্যালিউশন করা হলে এ খাতে বিনিয়োগ আসবে না।’
তিনি আরও বলেন, আজকেও একটি পত্রিকায় দেখলাম পুঁজিবাজার থেকে সব বিদেশিরা বিনিয়োগ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কারণ তারা ধারণা করছে এখানে কারেন্সি ডিভ্যালিউশন করা হবে। কিন্তু আমাদের সরকারের কারেন্সি ডিভ্যালিউশন করার কোনো পরিকল্পনা নেই। চলতে বাজেটে এটি ছিল না, আগামী বজেটেও এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত থাকবে না।
তিনি বলেন, প্রতিদিন যে পুঁজিবাজারের সুচক নিম্নমুখী হচ্ছে এটাও একটা রিউমার (গুজব)। পুঁজিবাজারে একেকটা রিউমার আসে, এটা বহুদিন চলে। আবার স্টেবল (স্থির) হয়, এবার এ রিউমার কয়দিন পর স্টেবল হবে তা জানি না।
১ জানুয়ারি থেকে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর:
আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ব্যাংকগুলোতে সুদের হার এক অঙ্ক (১০ শতাংশের নিচে) কার্যকর হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এবং শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
তিনি বলেন, এটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তবে সার্কুলার ইস্যু করেনি। তাদের একটি কমিটি করে দিয়েছিলাম সেই কমিটি কাজ শেষ করেছে। ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করার চেষ্টা করছি, সে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপন ইস্যু করবে। সে প্রজ্ঞাপনে সবকিছু থাকবে, আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কাজ করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন ‘স্টেকহোল্ডারদের সাথে কয়েক দফা বসে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
কমিটি কি সুপারিশ করেছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিটি যেহেতু সুপারিশ করেছে সেহেতু এটি পাবলিক হয়নি, পাবলিক হলে জানতে পারবেন, গোপন রাখবো না কিছু। সারা বিশ্বে কোথাও এতো হাই রেটে ইন্টারেস্ট নেই, সামঞ্জস্য করে চলতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ১ জানুয়ারি থেকে চেষ্টা করছি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করতে হবে। আক্ষরিক অর্থে হবে… পরে দেখা যাবে সাত দিন পর হলো। এর মাঝে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন করবে এবং সবাই তো রেডি।
১ জানুয়ারি থেকেই সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে সিঙ্গেল ডিজিট ঠিক থাকবে। জানুয়ারির ১ তারিখ থেকেই হবে, এর মধ্যে আশা করি বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার ইস্যু করবে এবং ইস্যু করলেই সবাই তো রেডি, ইস্যু করলেই কাজ শুরু করতে পারবে। শুরু করলেই ফলাফল দেখতে পারবে। গত ১ ডিসেম্বর সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার কৌশল ঠিক করতে একটি কমিটি গঠন করা হয় বলে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়ন হলে অনেক কাজ করতে সহজ হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন তারা বলছে সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে হবে। যারা ভালো ঋণগ্রহীতা তাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করতে এ প্রচেষ্টা। তারা টাকা নিয়ে টাকা শোধ করেনি তাদের জন্য নয়।
মন্তব্য
মন্তব্য করতে নিবন্ধন অথবা লগইন করুন